পঞ্চগড় প্রতিনিধি: নীফামারী থেকে: দীর্ঘ ৫৫ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি পর্যন্ত নবনির্মিত রেলরুটে ট্রেন চলাচল। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের (ভার্চ্যুয়ালি) মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ চালুর ঘোষণা দেবেন।
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর নতুন সাজে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশন। পুনরায় চালু হবে ভারতের হলদিবাড়ীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ। উদ্বোধনী দিনের জন্য ৩০টি এমটি র্যাকসহ ইঞ্জিনকে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য চলছে মহড়াও। চিলাহাটি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করাসহ ভিআইপি গেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে।
জোরেসোরেই এগিয়ে চলেছে অবকাঠামো নির্মাণকাজ। অত্যাধুনিক হাইটেক মডেলের রেলস্টেশন, দোতলা টিএক্সআর অফিস কক্ষ, স্টাফদের থাকার ২০টি রুম, কাস্টম অফিস ও ওভার ব্রিজ। এছাড়া ইয়ার্ডে আরও ৫টি লাইন বসবে।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে নীলফামারী চিলাহাটি এবং ভারতের হলদিবাড়ী হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়। ৫৫ বছর পর আগামী ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ পুনরায় এই রেলপথ চালুর অপেক্ষায়।
তাই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা ব্যস্ত। প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানালেন, এই রেলপথ চালুর মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুনমাত্রা যোগ হবে।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তীগুহ বলেন, রেল চালুর পর এখানে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে। পাশাপাশি যাত্রীবাহী রেল চালু হলে এটা পর্যটনের একটা প্রাণকেন্দ্র হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ অঞ্চলের মানুষজন বলছেন, এই রেলপথ চালুর মাধ্যমে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। আসবে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও।
নীলফামারীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, এখানে ইউনিফর্ম পরা পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করবে।
এ রেলরুট পুনরায় চালু করতে বাংলাদেশ সরকার ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলরুট স্থাপন করে। অপরদিকে, ভারত সরকার ৩১ কোটি রুপি ব্যয়ে হলদিবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রেলরুট স্থাপন করে। এরই মধ্যে দুই দেশই ওই রেলরুটে পরীক্ষামূলক রেলইঞ্জিন ট্রায়াল দিয়েছে।
অবিভক্ত ভারতের রেল যোগাযোগের এটিই প্রধান পথ ছিল। পাকিস্তান-ভারত ভাগ হওয়ার পরেও ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সেটি চালু ছিল। কলকাতা দার্জিলিং রুটে এ পথে চলাচল করতো ট্রেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করেছেন, তারই ফলশ্রুতিতে এই রেলরুট পুনরায় চালুর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ চালু হলে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের দ্বার আরো উম্মোচিত হবে।