কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এলজিএসপির অর্থায়নে সড়কে নির্মিত ইউনিয়ন সীমানা ফলকে লাগানো টাইলসে অঙ্কিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সরানো নিয়ে ঘটনার ১০ মাস পরে শুরু হয়েছে গুঞ্জণ। অনেকে প্রতিকৃতিকে ম্যুরাল বলায় প্রশাসন পড়েছে বিব্রতকর অবস্থায়।
জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি) এর আওতায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কের পাশে কুমড়পুর তেপথিতে ইউনিয়ন সীমানা ফলক নির্মাণ করে। এর একদিকে ‘স্বাগতম ভিতরবন্দ ইউনিয়ন’ এবং অন্যদিকে ‘খোদা হাফেজ ভিতরবন্দ ইউনিয়ন’ লিখে উভয়দিকে ‘বাল্য বিবাহকে না বলুন’ শ্লোগান লেখা হয়। এছাড়া ফলকের উভয় দিকের শীর্ষে ১৬ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি সাইজের টাইলসের উপর অঙ্কিত জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি (প্রতিকৃতি) লাগানো হয়। পরে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পত্রের নির্দেশনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারীতে ফলকের উভয় দিক থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির টাইলস দুইটি সরিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনার ১০ মাস পরে অনেকেই এ প্রতিকৃতিকে ম্যুরাল বলে তা সরানো নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। ক্রমে তার বিস্তার ঘটায় স্থানীয় প্রশাসন পড়েছেন বিব্রতকর অবস্থায়।
প্রকল্পের সভাপতি এবং ভিতরবন্দ ইউনয়নের ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আছমা বেগম বলেন, এটি ম্যুরাল নয় টাইলসের উপর অঙ্কিত ছবি। বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে শ্রদ্ধায় আমরা জাতীর জনকের প্রতিকৃতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এলজিএসপি’র প্রকল্পের অধিনে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। পরে এলজিএসপি’র কুড়িগ্রামের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ফারুক আহমেদ সরকারি নির্দেশনা দেখিয়ে বলেন,‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি যেখানে সেখানে লাগানো যাবে না। এতে বঙ্গবন্ধু’র অবমাননা হবে। আর এই প্রতিকৃতি না সরালে প্রকল্পের বিল ছাড় করা হবে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে সরকারি নির্দেশনা মানতে প্রতিকৃতি সরিয়ে নিয়েছি।
ভিতরবন্দ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ছবি বা প্রতিকৃতি ম্যুরাল নয়। কাজেই এনিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। আমার জানামতে প্রতিকৃতি সরানো হয়েছে প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। তবে একথা সত্য সীমানা ফলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি থাকলে ভাল লাগত।
ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম খন্দকার বাচ্চু বলেন, ‘আমি ওই ফলকের উভয় দিকে জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন করেছিলাম শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা থেকে। কিন্তু এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ম্যুরাল না সরালে প্রকল্পের বিল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান। তখন আমি পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের মতামত নিয়ে সীমানা ফলক থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরিয়ে নিতে বাধ্য হই। এতদিন পর হঠাৎ করে এ বিভ্রান্তি ছড়ানোয় অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করি প্রশাসন তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত এলজিএসপি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলেটর ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যত্রতত্র জাতির পিতার ছবি স্থাপন না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি আমাদের প্রকল্প দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে চলতি বছর ফ্রেব্রুয়ারী মাসে জাতীয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমি ভিতরবন্ধ ইউনিয়নের সীমানা ফলক থেকে জাতির পিতার ছবি (প্রতিকৃতি) সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতি আর ম্যুরাল নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক নয়। কোনটি ম্যূরাল আর কোনটি ছবি বা প্রতিকৃতি তা সবার জানা উচিৎ।’
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূর আহমেদ মাছুম বলেন, ‘এ ঘটনা প্রায় এক বছর পূর্বের। ম্যুরাল নয় এটি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। যা সরকারের নির্দেশনায় সরানো হয়েছে। এতে কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রকল্পের স্বার্থে এটি করা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা জামান বলেন, এ উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সরানোর কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে এক বছর পূর্বে ভিতরবন্ধ ইউনিয়নের সীমানা ফলকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের কয়েকদিনের মাথায় তা সরানো হয় সরকারি নির্দেশনায়। এ নিয়ে কোন বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।