চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ইব্রাহিমের গ্রামের বাড়িতে কান্না থামছে না। তাকে হারিয়ে স্বজনরাসহ গ্রামের সবাই বাকরুদ্ধ। বারবার মূর্ছা যান বাবা আবুল কাশেম মুন্সি ও মা দুলাপি বেগম।
মরদেহবাহী গাড়ির সাদা গ্লাসের উপর হাত দিয়ে প্রিয় ছেলের লাশের মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন মা দুলাপি বেগম।
আর কান্নাকণ্ঠে বলছিলেন, আল্লাহ আমাকে কি পরীক্ষায় ফেললেন। পাশেই ইব্রাহিমের স্ত্রী মুন্নি খাতুন বিলাপ করছেন আর বলছেন, ‘আমার ও আমার অনাগত সন্তানকে কে দেখবে। এই জীবন রেখে কি লাভ।’
এমন অবস্থা দেখা যায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামে নিহত ইব্রাহিমের বাড়িতে ।
এদিকে সোমবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় আশপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবরে গত দুই দিন ধরে প্রতিবেশী ও আশেপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করেছেন। জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুন্নি খাতুন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ভাই-বোনসহ অন্যান্য স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারী হয়ে উঠে।
স্ত্রী মুন্নি খাতুন জানান, আমার ও আমার অনাগত সন্তানকে কে দেখবে। এই জীবন রেখে কি লাভ।
মুন্নির বড়বোন রেহেনা খাতুন বলেন, মুন্নি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগামী ২৮ জুলাই সন্তান ভূমিষ্ঠের সম্ভাব্য দিন। শনিবার রাত ৯টায় মুন্নীসহ তার মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়। কোরবানির ঈদে বাড়ি এসে সন্তানের মুখ দেখবে জানিয়েছিল। একই সঙ্গে সন্তান ও মুন্নিকে চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ছেলে হলে হাফেজ বানাতে চেয়েছিল। আমার বোন-জামাইয়ের সেই আশা আর পূরণ হলো না।
ইব্রাহিম প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের শিপিং সহকারী পদে চাকরি করতেন। একই প্রতিষ্ঠানের অন্য শাখায় কাজ করেন তার খালাতো ভাই নাজমুল হোসেন।
তিনি বলেন, ৪ জুন রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ইব্রাহিম আগুনে দগ্ধ হয়। তার আগে সে বাড়িতে মা, বাবা ও স্ত্রীসহ অন্য স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তার মাথার পেছনে ও পেটে আঘাত ও আগুন লাগে। মুখ, টি-শার্ট ও মোবাইল ফোন দেখে তাকে শনাক্ত করি। উদ্ধারের সময় তার ফোনটি সচল ছিল।