সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে দগ্ধ রোগীদের অধিকাংশের চোখের সমস্যা হচ্ছে। তারা চোখ মেলতে পারছেন না। তাদের শ্বাসনালিও পুড়েছে। এখন পর্যন্ত দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩০ জন। তার মধ্যে অধিকাংশই চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।
গতকাল সোমবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিট ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিদগ্ধদের বেশির ভাগেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এই তথ্য দিয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা চমেক হাসপাতালে নেই। যেসব রোগীর শ্বাসনালি পুড়েছে, তাদের মধ্যে ৮২ শতাংশ রোগীর চোখেও সমস্যা হচ্ছে।
সকালে পোড়া রোগীদের দেখতে এসেছিলেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, অধিকাংশের চোখের সমস্যা হচ্ছে। তাদের চোখের চিকিৎসক দেখাতে হবে। তা হলে তারা দ্রুত সুস্থ হবেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পেট্রোল বা কোনো দাহ্য পদার্থ কিংবা গ্যাস থেকে আগুন লাগলে বা বদ্ধ কোনো জায়গায় আগুন লাগলে মানুষের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। শ্বাসনালির পোড়াটা সরাসরি ফুসফুসে প্রভাব সৃষ্টি করে। এ ছাড়া দাহ্য পদার্থের লাভা যদি রোগীর চোখে লাগে, তা হলে তাদের চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে চোখের কর্ণিয়া বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গতকাল দুপুরে ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে কথা হয় দগ্ধ তোফাজ্জল হকের (৩৮) সঙ্গে। তিনি বিএম ডিপোর আইটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমার ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। শরীরে তেমন সমস্যা না হলেও আমি এখন চোখ মেলতে পারছি না। চোখ জ্বলছে। মনে হচ্ছে, আমার চোখের মধ্যে কেউ মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়েছে। এখানকার চিকিৎসকরা পরে আমাকে চোখের ডাক্তার দেখাতে বলছেন।’
একই ওয়ার্ডে আমিরুল ইসলাম (৩২) নামের আরেক রোগী বলেন, তার শরীর তেমন পোড়েনি। তবে মুখের কিছু অংশ পুড়েছে। এ ছাড়া তার মুখে ধোঁয়া প্রবেশ করে শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি চোখে দেখছেন কম।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার লিটন কুমার পালিত বলেন, যদি দাহ্য পদার্থের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে, তা হলে চোখে ও শ্বাসনালিতে সমস্যা হবে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন বলেন, আহতদের শরীরের তিন থেকে ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বেশির ভাগের শ্বাসনালি ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘যাদের চোখের সমস্যা হচ্ছে, তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে।’