কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী হত্যার দশ বছর আজ। আজও কাঙ্খিত বিচার পায়নি পরিবার।
৭ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে তার ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী। আয়োজন করা হয়েছে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।
এদিকে গত কয়েক বছরের মত এবারেও ঢাকায় ১দিনের কর্মসূচী পালন করছে নাগরিক পরিষদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বাড়ী ধারায় পার্ক রোডের নাম ফেলানী সরণী করার জন্য তারা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে গণ জমায়েত আয়োজন করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন। তিনি জানান, এ জমায়েতের মাধ্যমে তারা ৭ জানুয়ারী বিশ্ব ব্যাপী ফেলানী দিবস পালন, ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারসহ সীমান্ত আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্থ সকল ব্যাক্তি ও তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপুরন প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পার্ক রোড অথবা কুটনৈতিক এলাকায় ১টি রাস্তার নাম ফেলানী সরণী, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও সার্বভৌমত্ব লংঘন বন্ধের দাবী জানাবেন।
তিনি বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর বিশ্ব ব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারী ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর ২০১৫ সালে তারা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্য যে কোন রাষ্ট্রকে প্রস্তাব আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭ নং আন্তর্জাতিক ৩ নং সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সাথে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। তার বাড়ী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষনা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন। আবারও ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুন:বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারনে তা একাধিকবার স্থগিত হয়।
এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১ম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির সভাপ্রদান এ্যাডভোকেট সালমা আলী ২য় বাদী হয়ে আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রনালয় (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া) এর সচিব এবং বিএসএফ এর মহাপরিচালককে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারী মামলা করেন। তারা ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপুরন চেয়ে আরও একটি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির সভাপ্রধান মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সালমা আলী মুঠোফোনে জানান, এখন পর্যন্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ স্বচ্ছ বিচার না পাওয়ায় ওই মামলার একজন বাদী হিসেবে আমি দু:খ প্রকাশ করছি। আশা করছি আমরা কাঙ্খিত বিচার পাব।
পরে ২০১৫ সালে আইন ও শালিস কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরও একটি ক্ষতিপুরন মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপুরন হিসেবে ৫ লক্ষ রুপী প্রদানের অনুরোধ করেন। এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এরপরে ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী শুনানী দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি এখনো।
ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জর্জ কোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, করোনায় ভার্চুয়ালী চলছে ভারতীয় সুপ্রিমকোটের্র কার্যক্রম। ফলে ফেলানী হত্যা মামলার শুনানী হচ্ছে না। আমরা চাই ভার্চুয়ালী শুনানী হলেও দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোড়দার হবে। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তা উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক।
৬ জানুয়ারী বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গিয়েছি কিন্তু ১০ বছরেও কাঙ্খিত বিচার পেলাম না।