কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: গতিপথ আঁকাবাকা। ভেসে উঠেছে তলানী। ফলে এক সময়ের অসীম গভীরতার ব্রহ্মপুত্র নদ কোথাও কোথাও হয়ে গেছে খর¯্রােতা। বন্যার পানি কমতে শুরু করলে দেখা দেয় ভাঙ্গন। প্রতিবছর নতুন নতুন জনপদ ও অসংখ্য আবাদী জমি ভেঙ্গে এগিয়ে যায়। পিছনে জেগে ওঠে বিস্তৃর্ণ চরা ল। জোৎস্না রাতে সে বালুতে রুপালী আলো ছড়ায়। দিনে চিক চিক করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তপ্ত হয় সে বালুরাশী। শুষ্কতায় সবুজের সম্ভাবনা মিলিয়ে যায় শুন্যে। শুধু মাঝে মাঝে দেখা যায় ওই পরিবেশে উপযোগি উদ্ভিদ ঝাউগাছ। আর শরতে বিস্তৃর্ণ কাশবন। একই অবস্থা কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজোলায় দুধকুমর, ফুলকুমর নদ, গঙ্গাধর ও শংকোষ নদী তীরবর্তী বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলগুলোর।
বন্যায় নদ ও নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে পলীর আস্তরণ পড়ায় গত কয়েক বছর থেকে সেখানে চাষাবাদের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে চিনাবাদাম, সুর্যমূখী, মাষকালাই, খেসারী ও মসুর ডাল, তরমুজ চাষে সীমাবদ্ধ। তবে কোথাও কোথাও মালভোগ ও সাগর কলা লাগিয়েছেন কেউ কেউ। তবে বেশিরভাগ চরা লে তারা লাগিয়েছেন ডাল। সরেজমিন জেলার নাগেশ্বরীতে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদ তীরবর্তী চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে এ দৃশ্য। দিগন্ত বিস্তৃত চরা লের শত শত বিঘা জমিতে শোভা পাচ্ছে মাষকালাই ক্ষেত। এগুলো থেকে কয়েকদিন পরে ফসল ঘরে উঠবে কৃষকের ঘরে। অপরদিকে ধীরে ধীরে ডাল-পালা মেলে ধুসর বালুচর ঢেকে দিচ্ছে খেসারী ডালের সবুজ ক্ষেত। এতে স্বপ্ন দেখছেন চরা লের কৃষক।
নুনখাওয়া মাঝের চরের জিয়ারুল ইসলাম, ছকিবর, মাহাবুর, সারিসুরির আশরাফুল, জয়নাল, সবুজ, ইসলাম হোসেন, নছর আলীসহ অনেক কৃষক জানান, ডাল চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। একটি চাষ করে, সামান্য সার প্রয়োগ করে ছিটানো যায় ডালের বীজ। পানি স্বল্পতায় সব বীজ থেকে গাছ হয়না, কিছু গাছ পরিপক্ক হওয়ার আগেই মরে যায়। তারপরেও অবশিষ্ঠ ডালের গাছ থেকে যা ফসল আসে তা দিয়ে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারা বাকী ফসল বাজারে বিক্রি করে আয় করেন। তা দেখে প্রতিবছর বাড়ছে আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা, বাড়ছে ডালের চাষ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ রায় জানান, চরাঞ্চলের এ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারীভাবে এবারে ৮শত জন কৃষককে সুর্যমূখী, ৯৯০ জনকে চিনাবাদাম, ১হাজার জনকে খেসারী ও ১হাজার জন কৃষককে মসুর ডালের বীজ-সার দেয়া হয়েছে। তাদের দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হলে চরাঞ্চলে এগুলোর চাষ আরো বাড়বে। কারন এগুলো ফসল চরা লেই ভাল ফলে।