আর কে ওসমান আলী (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর): দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এই জাতীয় উদ্যান অবস্থিত ।নবাবগঞ্জ বনবিটের জগন্নাথপুর, হরিল্যাখুর, বড় জালালপুর, আলোকধুতি, তর্পনঘাট, রসুলপুর ও খটখটিয়া কৃষ্টপুর মৌজা নিয়ে উদ্যান গঠিত। স্থানীয়ভাবে পঞ্চবটীর বন নামেও পরিচিত। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর নবাবগঞ্জ বনবিটের এই অঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আয়তন ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর বা ১২৭৮ দশমিক ৫০ একর। আশুড়ার বিলে তিন দিক ঘিরে আছে শালবন এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই বনেই আছে অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সীতারকোর্ট বিহার। যা নিয়ে ‘সীতার বনবাস’ কিংবদন্তি রয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে বিখ্যাত আশুড়ার বিলে নির্মিত হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শাল কাঠের আঁকাবাঁকা সেতু। পর্যটকদের প্রাধান্য দিয়ে উপজেলা প্রশাসন এটি নির্মাণ করেছে। নাম রাখা হয়েছে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেতু’। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার। এটি পূর্ব-পশ্চিমে নির্মিত। সেতুটির আকার দেওয়া হয়েছে ইংরেজি বর্ণ জেড এর মতো। যা সেতুটির বেশ কয়েটি জায়গায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এদিকে আশুড়ার বিল উন্নয়নে পর্যটন মন্ত্রণালয়, উপজেলা পরিষদ, এডিপি, দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পেয়ে কাঠের সেতু, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা হেরিং বন্ড’ এর কাজ অপর দিকে উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১ কিলোমিটার রাস্তা পাঁকা করণ (সিলকোট) সম্পন্ন হয়েছে।
সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে চলমান নানা ধরনের কার্যক্রম। ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। আশুড়ার বিলকে মাছের অভয়াশ্রম ও পর্যটন উপযোগী করতে পানি ধারণের জন্য ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়। কিন্তু চলমান এই কাজকে বাধাগ্রস্থ করতে বিলে ধানচাষকারী অবৈধ দখলদার সোচ্চার হয়।নির্মিত ক্রোস ড্যামের বাধ ভেঙ্গে দেয় ও বিলে ধান চাষ করা শুরু করে এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলাও হয়। কিন্তু এর পরেও থেমে নেই তারা। বিভিন্ন আন্দোলন ও হুমকি ধামকির মাধ্যমে তারা আশুড়ার বিলে ধান চাষ করছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ক্রসড্যাম সংস্কার করে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা ও আশুড়ার বিলকে মাছের অভয়াশ্রম করার দাবি জানিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার সকল পেশাজীবি সংগঠন, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ শহরে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে ৬ দফা দাবিতে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহারের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক বলেন, এক সময় শাপলা-পদ্মে ভরা এই আশুড়ার বিলে অতিথি পাখি আসত। কালের বিবর্তনে এই বিল তার ঐতিহ্য হারিয়ে ছিল। তবে উপজেলা প্রশাসন বিলটিকে সংস্কার করে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনছে। বিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ, উন্নত শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বিলে দীর্ঘতম আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু সৃষ্টি করেছে অপার আগ্রহ। এটিকে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করছেন বলে উল্লেখ করেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান জানান- উত্তর জণপদের নান্দনিক কাঠের সেতু দেশের ভ্রমন পিপাসুদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অবৈধ দখলকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন আশুড়ার বিল দখল করতে অবৈধ দখলদাররা স্থানীয় গোলাপ সরকারের (৭২) স্বাভাবিক মৃত্যুকে অনশনে মারা গেছে বলে মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছিলো। মৃত গোলাপ সরকার উপজলোর হরিপুরে (আদর্শ গ্রাম) বাসিন্দা। তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ শারিরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য ছিলেন। এ অবস্থায় গত ৫ নভেম্বর নিজ বাড়িতে মারা যান গোলাপ সরকার। এরপরই বিল দখলকারীরা গুজব ছড়াতে থাকে যে, গোলাপ সরকার তাদের ক্রস ড্যাম সংষ্কারে বিরুদ্ধে আন্দোলনে অনশন করে মারা গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়।ঐতিহাসিক আশুড়ার বিল রক্ষায় অবৈধ দখলকারীদের যে কোন ধরনের অপচেষ্টা গুজব মোকাবেলা করা হবে।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছঃ নাজমুন নাহার জানান- বিলের পূর্বদিকে শেখ রাসেল ক্রস রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। সম্প্রতি মাটির বাঁধ ভেঙ্গে আশুড়ার বিলের পানি বের হয়ে গেছে। অচিরেই মাটির বাঁধটি শক্তিশালীভাবে বাধা হবে। অবৈধ দখলকারীদের সম্পর্কে তিনি জানান- গোপনে আশুড়ার বিলের একাংশে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর মৌজায় প্রায় ৩০ একর জলাশয় একটি অসাধু মহল পাড় বেধে জবর দখল করে। বিষয়টি জানতে পেরে জবর দখলের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা ঐ পাড়গুলি ভেঙ্গে দিয়ে সরকারী সম্পত্তি উদ্ধার করা হচ্ছে। এমন অভিযান অব্যহত থাকবে। ঐতিহাসিক আশুড়ার বিল রক্ষায় অবৈধ দখলকারীদের যে কোন ধরনের অপচেষ্টা গুজব আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। বিলের উন্নয়নমূলক প্রতিটি কাজেই তিনি ভূমিকা রাখবেন।
শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাবুব আলম জানান- যারা আশুড়ার বিলে ধান চাষ করছিল। প্রকৃত পক্ষে তাদের বিলে জমিতে কোন প্রকার স্বত্ব সামিত্ব নাই। তারা তাদের অবৈধ দখল ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ভাবে পায়তারা করছে। যা আশুড়ার বিল ও জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। জাতীয় উদ্যান ও আশুড়ার বিলের উন্নয়ন হবে এটা উপজেলা বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী।
উপজেলার ভাদুরিয়া ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সিসেম আহমেদ বলছেন, উদ্যানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য নানা রকম সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে কর্মসংস্থান হবে স্থানীয়দের।