কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে পুষ্টি কার্ড নিয়ে হাতাহাতিতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। শনিবার শেষ বিকালে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ওই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মজাহার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম তার স্ত্রীর নাম পুষ্টি ভাতার তালিকায় অন্তর্ভৃুক্ত করার জন্য চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মন্ডল (৫৪) এর কাছে যান। এসময় তিনি জানান, সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা চুড়ান্ত করে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। আর দেয়া যাবে না। এরপর তার সামনে অপর একজন চেয়ারম্যানকে আইডি কার্ড দিলে তিনি তা জমা নেন। তা দেখে শহিদুল চেয়ারম্যানকে সরাসরি টাকার প্রস্তাব দিলে তিনি তার ছোট ভাই আইনুল হকের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
আহত চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মন্ডল
প্রথমে ফিরিয়ে দেয়া, পরে টাকার প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় শহিদুল চেয়ারম্যানকে গালিগালাজ করতে থাকে। এতে রেগে গিয়ে চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন তাকে চর-থাপ্পর দিলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় শহিদুলের ঘুষিতে চেয়ারম্যানের ডান ভ্রুর উপরে ফেটে রক্ত বের হয়। পরে চেয়ারম্যানের ভাই আইনুল, গ্রাম পুলিশ সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে শহিদুলকে ধরে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। চেয়ারম্যান আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত জনতা ইউনিয়ন পরিষদে ভীড় করে। তারা শহিদুলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। এই সুযোগে চেয়ারম্যানের ভাই, ছেলে, ভাতিজা ওই কক্ষের তালা খুলে দরজা লাগিয়ে শহিদুলকে বেধে আধা ঘন্টা ধরে মারপিট করে এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। এ ঘটনায় উপস্থিত জনতা আহত শহিদুলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এর প্রতিবাদ জানাতে থাকে। পরে স্থানীয় লোকজন এবং চেয়ারম্যানের পরিবারের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে সিরাজুল (৪১) জনি (২৪) ডাঃ আব্দুস সামাদ (৫৮) আবুবকর সিদ্দিক(৩৬) আহত হয়। এক পর্যায়ে শহিদুলকে মারপিট করার প্রতিবাদে উত্তজিত জনতা চেয়ারম্যানকে প্রায় ঘন্টা ব্যাপি অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে তার নিজ বাড়ীতে পৌছে দেন এবং শহিদুলকে মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে।
আহত শহিদুল বলেন, নিজের স্ত্রীর নাম পুষ্টি ভাতার তালিকায় অন্তর্ভৃুক্ত করার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে গেলে প্রথমে তিনি তালিকা চুড়ান্ত হয়েছে বলে তাকে ফিরিয়ে দেন। পরে টাকা দিতে চাইলে তিনি তার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। চেয়ারম্যানের এ আচরনে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে গালিগালাজ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউনিয়ন পরিষদের ঝাড়–দার আহম্মদ আলী ও মুদি দোকানদার রফিক ইসলাম জানান, চেয়ারম্যানের সাথে গোপন আর্থিক লেনদেনের কারনে মারামারির ঘটনাটি ঘটেছে। এই লেনদেনের সাথে চেয়ারম্যান ও তার ভাই আইনুল হক জড়িত।
স্থানীয় মাইদুল হক জানান, এর আগে ভিজিডি কার্ড দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ৫০ জনের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে দেয় শহিদুল। এর মধ্যে ১৫/২০ জন কার্ড পান। সেদিন নিজের স্ত্রীর জন্য পুষ্টি কার্ডের বিপরীতে আবারও টাকা দাবী করলে পুর্বের টাকা ফেরত চান শহিদুল। এ নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মন্ডল জানান, শহিদুলকে পুষ্টি কার্ড দিতে না চাইলে সে অকথ্য গালিগালাজ করে আমার উপর চড়াও হয়। পরে লোকজন তাকে রুমে আটকে রাখলে পুলিশ এসে নিয়ে যায়। টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পুর্ন মিথ্যা।
ফুলবাড়ী থানার এস.আই প্রভাত চন্দ্র জানান, আহত অবস্থায় চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে বাড়ীতে এবং শহিদুলকে ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।