কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নদী অববাহিকার চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ জমিতে মরিচ ক্ষেতে স্বপ্ন দোলে দরিদ্র কৃষকের। উৎপাদিত ফসলের আয়ে অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আসায় তাদের হাত ধরেই প্রতি বছর বাড়ছে এর চাষ। এবারে উপজেলার ২৭৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েয়ে দেশের গুরুত্বপুর্ণ অর্থকরী এ মসলা ফসলের।
জানা যায়, ঝালযুক্ত মরিচ একটি গুরুত্বপুর্ণ অর্থকরী ফসল। পাকা ও কাচা অবস্থাতেই এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রায় সব অঞ্চলেই এর চাষাবাদ হলেও চরাঞ্চলে এর উৎপাদন বেশি হয়। তাই উপজেলার চরাঞ্চলীয় জমিতে এখন বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। সরেজমিন গেলে চোখে পড়ে দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্র, শংকোষ, ফুলকুমর, গঙ্গাধর নদীর অববাহিকার বিস্তৃর্ণ জমিতে শোভা পাচ্ছে মরিচ ক্ষেত। সেখানেই দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। এখানে উৎপাদিত ঝালযুক্ত মরিচ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন পাইকারী বিক্রেতার হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে। এতে উৎপাদন খরচ বাদে যা লাভ হয় তা দিয়ে এর সঙ্গে জড়িত অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। তারা স্বচক্ষে দেখেছেন সফলতা। অভাবের সংসারে অশান্তী উবে গিয়ে ধীরে ধীরে আসছে স্থিরতা ও মনের শান্তি। এখন তাদের মনের কোনে দুই-একটা সুখ-স্বপ্ন উকি দিচ্ছে। তেমনি একজন কেদার ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের মমিন উদ্দিন। স্ত্রী, দুই ছেলে তিন মেয়ে আর এতিম দুই ভাতিজী নিয়ে ছিল তার টানাপোড়েনের সংসার। সহায় সম্বল শুধু বসতভিটে। তাই দিন মজুরী করেই সংসার চলে। শীত মৌসুমে মাঝে মাঝে সরাসরি ক্ষেত থেকে কৃষকের নিকট মরিচ নিয়ে বাজারে পাইকারের কাছে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখায় মরিচ চাষে আসক্তি বাড়ে। পরিবারের সচ্ছলতা আর নিজেকে স্বাবলম্বী করতে আরো ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে গত তিন বছর আগে একলক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে মরিচ চাষের জন্য সংকোষ নদীর তীরে আট বিঘা জমি বন্ধক নেন তিনি। সেখানে মরিচ চাষ করে প্রথম বছরেই মৌসুম শেষে সে ঋণ শোধ করেন। এবারেও সেখানে মরিচ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি দুই ধাপে ১৫০ মণ মরিচ তুলেছেন। যেহেতু খরিপ মৌসুমে ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত মরিচ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত সময়। সেহেতু আরো একবার মরিচ উঠবে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে শেষ ধাপে মরিচ তুলে বিক্রি করলে তা থেকে প্রায় দেড় থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা ঘরে উঠবে তার। ঠিক এমন সাফল্যের গল্পকথা শোনান নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইদ্রিস আলী, আবু সামা, সামাদ আলীসহ আরো বেশ কয়েকজন মরিচ চাষী। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মরিচ চাষ শুরু করায় চরাঞ্চলে ধীরে ধীরে এর চাষ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ রায় জানান, এবারে অনুকুল আবহাওয়ায় খরিপ মৌসুমে শীতকালীন মরিচ উৎপাদন ভালো হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন মরিচ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত সময় হওয়ায় শেষ দফায় কৃষকের ঘরে আরো মরিচ উঠবে। বাজারে এর চাহিদা ও মুল্য আশানুরুপ হওয়ায় মৌসুম শেষে কৃষক লাভবান হবেন বলে আশা করা যায়।