• বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
মেহেন্দিগঞ্জে চুরি হয়ে যাওয়া সে মসজিদে ড. শাম্মি আহমেদ এর পানি তোলার পাম্প মোটর দান! ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেনা  শর্তে রফিকুল ইসলাম মাদানীর জামিন! উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের ক্ষমতা কেড়ে নিলেন হাইকোর্ট! বাকেরগঞ্জে ৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল সহ ৩ জেলে আটক জাজের হাত ধরে আবার নায়িকার ভূমিকায় শাবনূর! বাকেরগঞ্জে জমি আত্নসাত করতে একজনকে হত্যার চেষ্টা প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে পেশাগত দক্ষতার বিকাশ ঘটে, নড়াইল পুলিশ সুপার বরিশালে ভাসমান বেডে তরমুজ আবাদ বিষয়ক মাঠদিবস অনুষ্ঠিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলে ফসলী জমিতে সেচ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ৩ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম!




তাসনুভার বাধা পেরোনোর গল্প

Reporter Name / ১২৭ Time View
Update : সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১




বাবাকে বলেছিলাম আমাকে একটা বছরের টাকা দাও। এরপর আর কখনো আমার পড়ার খরচ দিতে হবে না।’ এভাবেই কন্যা বা নারী হিসেবে নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোকে পেরিয়ে আসার গল্প শুরু করেন তাসনুভা আহমেদ। তিনি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ারের কার্যনির্বাহী পরিচালক।

তাসনুভার বিশেষত্ব আছে, তিনি এবং তাঁর টিম বিজ্ঞাপন তৈরি করেন ছাপা কাগজ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবটার জন্যই। যাকে বলে একদম বাড়ির মতো সব একসঙ্গে পাওয়ার আরাম, তা-ই দেওয়ার কাজ করেন তাসনুভারা। এ কারণে বাজারের নেতৃত্ব তাসনুভা ও তাঁর দলের।

তাসনুভা আহমেদ একদম পুরান ঢাকার মেয়ে। স্কুল সান ফ্রান্সিস, কলেজ মতিঝিল আইডিয়াল। সাধারণের ধারণা থেকে ধরে নেওয়ায় যায়, ঢাকায় থাকা ছেলেমেয়েদের জীবন অনেকের চেয়ে বেশি নিশ্চিত। তাঁদের থাকার কথা ভাবতে হয় না। খাওয়ার খরচও নগণ্য। কারণ, পরিবার তো সঙ্গে থাকেই। কিন্তু বাস্তবতা আলাদা। আরও ভালো করে বললে কন্যাদের বাস্তবতা আলাদা।

‘আমাদের লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্যটা ছিল ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া। এ জন্য ডিগ্রির নামটুকু বলাই যথেষ্ট, সেই ডিগ্রি দিয়ে তো আর কাউকে ক্যারিয়ার করতে হবে না। করতে দেওয়াই-বা হবে কই? বিয়ের পরে বাচ্চাকে প্রাথমিকের পাঠ দিতে পারলেই তো অনেক। মেয়েদের কাজ শুধু রান্না করা, বাচ্চা পালন। এরপর পরিবারের পুরুষেরা চাপে রাখবেন, বড় হয়ে বাচ্চারা চাপে রাখবে—আমি এটা মেনে নিতে পারতাম না কখনো,’ বলেন তাসনুভা।

এইচএসসির পর তাসনুভা চেষ্টা করেন ব্যবসায় প্রশাসনে লেখাপড়া করার। সুযোগ পান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ, তার ওপর পুরান ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া। নাকচ হয়ে যায় তাঁর আরজি। ১৯৯৯ সালে যখন তাসনুভা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন, তখন দেশের বাস্তবতাও আলাদা। ব্যবসায় প্রশাসন থেকে আসা মেয়েরা খুব উচ্চ পদে গেছেন, এমন উদাহরণও খুব কম। ‘বাইরের উদাহরণ যা-ই হোক, আমাদের তো শুনতে হয়, এই পরিবারের মেয়েরা কখনো করেনি, তাই এটা করতে চাওয়াও গর্হিত অপরাধ, এতে কে টাকা বিনিয়োগ করবে?’ বলেন তাসনুভা।

সদ্য এইচএসসি পাস তরুণী তাসনুভার পাশে দাঁড়ান তাঁর কখনো রান্নাঘরের বাইরে বের না হওয়া গৃহিণী মা। ‘আমরা দুজন মিলে বাবাকে খুব বোঝালাম, একটা বছরের পড়ার টাকা দিলে পরের বছরগুলোতে আর দিতে হবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখনো এত প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়নি। রেজাল্ট ভালো করলে স্কলারশিপে পড়া যায়, এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করেন তাসনুভা। এরপরই বিজ্ঞাপনের অথই সাগরে।

বিশ্ববিদ্যালয় তাও পার হয়ে যায়, কিন্তু বিজ্ঞাপন বাজারের জীবন নারী তো বটেই, পুরুষের জন্যও খুব কঠিন। এখানে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা কাজের মধ্যে সজাগ থাকতে হয়। রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত অফিস কোনো ব্যাপারই নয়। তাসনুভাকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে পুরুষদের সঙ্গে। তাসনুভার ভাষায়, ‘যাদের অফিসে আসার আগে টেবিলে নাশতা রেডি থাকে। বাড়ি ফিরে ভাত। আর আমি সকালের নাশতাও বানাই, রাতের ভাতও। তো কাজ হাতে নিয়ে যোগ্যতা প্রমাণের আগেই বিচারের রায় এসে যায়—ও তো মেয়ে, পারবে না, বাদ দাও।’

সবাই তাসনুভাকে বাদ দিলেও তাসনুভা নিজেকে বাদ দিতে পারেন না। শুধু যে পরিবার বা সমাজের কাছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করা, তা-ই নয়। বিজ্ঞাপনশিল্পের নিত্যনতুন সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সখ্যই হয়ে যায় তাঁর। ‘বিজ্ঞাপন খুব মজার বিষয়, এখানে প্রতিদিন গ্রাহক বদলায়, নতুন প্রতিষ্ঠান, নতুন পণ্য, নতুন রকমের চ্যালেঞ্জ, এর মধ্যে আসে নিউ মিডিয়া মানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। একদম অ আ থেকে পাঠ নিতে হয় বিজ্ঞাপন শিক্ষার।’

লতে চলতে আমি আস্তে আস্তে জীবনের ভারসাম্য রাখা শিখে ফেলি। যেমন প্রথম বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে যেদিন কাজে যোগ দিই, আমি সাত দিন পর্যন্ত কেঁদেছি। এরপর আমি শিখলাম কীভাবে দুটোকেই আমার সামলাতে হবে। নতুন নতুন বুদ্ধি, কৌশল আমার মস্তিষ্ককে খুব সচল রাখত। এর সব কটি কাজে আসত অফিসের কাজেও। সারা দিন অফিস করেও বিকেলে এসে নিউ মিডিয়ার পাঠ পড়ার শক্তি টিকে থাকত।

২০১৬-এ এসে জীবনের সব ভারসাম্য নেওয়ার শিক্ষা নিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি বিজ্ঞাপনী সমাধান দেওয়ার ঝুঁকি নিলেন তাসনুভা। ‘দুই বছর ধরে বসদের বুঝিয়েছি কেন একটা প্রতিষ্ঠানকে এক ছাদের নিচে সব সমাধান দিতে হবে। বলেছি, আমাকে চেষ্টা করতে দিন, না হয় বিফলই হলাম।’ ৩৬ জন কর্মী নিয়ে কাজ এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ারের ভেতরেই তাসনুভার দল, ডিজিটাল সলিউশন। তাদের কাছে গিয়ে শুধু বলতে হয়, কেমন বিজ্ঞাপন কোন মাধ্যমে যাবে, বাকি কাজ সব তাসনুভাদের। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নতুন বাজারে বিজ্ঞাপন তৈরিতে তাঁর দলটি সিদ্ধহস্ত।
তাসনুভার সামনে এখন অন্য লক্ষ্য। যে কঠিন পথটা তিনি কষ্ট করে পার করেছেন, তা অন্য নারীদের জন্য মসৃণ করে ফেলা। যেন তাসনুভাকে দেখে যখন মেয়েদের বাইরে কাজ না করার পারিবারিক প্রথা ভেঙে এগিয়ে আসেন, তাঁরা যেন সমান কর্মী হিসেবে কাজের জায়গা পান, নারী কর্মী হিসেবে বাদ না পড়ে যান।





আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/deshytvn/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ