• রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
মোরেলগঞ্জে স্বাধীনতা দিবসে পুষ্পমাল্য অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত দুইদিন নিখোঁজের পর নদী থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার নওগাঁয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাব বিতরণ কার্যক্রম শুরু নওগাঁর বদলগাছীতে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত উপযুক্ত খেলার মাঠ না থাকায় বড়িয়া ঐতিহাসিক বি পি এল খেলা হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পত্রিকার হকার ইব্রাহিমের ভবন নির্মানের অভিযোগ! গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত স্বাধীনতা দিবসের ব্যানারে “স্বাধীনতা “ বানানই ভুল! নওগাঁর পত্নীতলায় ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সিলেটে ইমাজিন ফাউন্ডেশন সিলেটের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ




কণ্ঠে গান নিয়ে অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলা

Reporter Name / ১৩৪ Time View
Update : সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১




অস্ত্র হাতে সামনের কাতারে থেকে বহুবার শত্রুর মোকাবিলা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা শামসুন্নাহার। কখনো ভাবেননি অদৃশ্য বেপরোয়া এমন শত্রুর মোকাবিলায় পথে নামতে হবে তাঁকে। শঙ্কা থাকলেও পিছিয়ে যাননি তিনি। তবে এবার হাতে অস্ত্রের বদলে তাঁর কণ্ঠে ছিল গান।

ঢাকায় পুলিশ অফিসার্স মেসে বসে গত শুক্রবার কথা হচ্ছিল গাজীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার, বিসিএস ২০তম ব্যাচের সদস্য শামসুন্নাহারের সঙ্গে। এখন তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক। অবশ্য সদর দপ্তরে এ দফা থিতু হতে পারছেন না চৌকস এই কর্মকর্তা। জাতিসংঘ কার্যালয়ে যোগ দিতে শিগগিরই দেশ ছাড়তে হচ্ছে তাঁকে।

এই প্রতিবেদনের নায়ক কেন শামসুন্নাহার? পাঠকের নিশ্চয়ই করোনার সময়ে দেশের কয়েকটি জেলার পুলিশের অন্য রকম উদ্যোগের কথা মনে আছে। গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তেমনই এক উদ্যোগের প্রবক্তা। শুরুতে মাইকিং করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কেন ঘরে থাকা প্রয়োজন, রোগটি কতটা ভয়াবহ। খুব একটা সাড়া পাননি। তারপর একদিন ভাবলেন, গান গেয়ে সচেতন করবেন। যে ভাবা সেই কাজ। তিনি ও তাঁর বাহিনী নিয়মিত পথে দাঁড়িয়ে গান করেছেন। মানুষও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। চন্দ্রার মোড়ে একদিন এই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও।

শামসুন্নাহার যতই বলেন, ‘চাচা, এখন তো বাইরে থাকা যাবে না। শরীর খারাপ করবে। বাসায় যান।’ তিনি ততই আরেকটু সময় বাড়ানোর অনুরোধ করতে থাকেন। শামসুন্নাহার তাঁকে ঘরে পাঠিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু স্বস্তি পাননি। বারবারই মনে হচ্ছিল, হয়তো ওই বৃদ্ধ দুমুঠো ভাত জোটাতে পথে নেমেছিলেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। প্রস্তাব দেন, তাঁরা রেশন হিসেবে যা পান, সেখান থেকেই দরিদ্রদের খাদ্যের সংস্থান করবেন। না হলে মানুষকে বাসায় রাখা যাবে না। সবাই তাঁর এই প্রস্তাবে সম্মত হন।

শামসুন্নাহারের কাজ ছিল নানামুখী। খুব প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ বাসা থেকে বের না হন, সেটা নিশ্চিত করতে হয়েছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ তো ছিলই, পাশাপাশি দু-দুটো পরিবারের দেখভালের দায়িত্বও ছিল তাঁর। এই দুটি পরিবারের একটির সদস্য তাঁর স্বামী ও দুই সন্তান, অন্যটি গাজীপুরের পুলিশ বাহিনী।

সাধারণ ছুটি ঘোষণার একদম শুরুর দিককার একটা ঘটনার কথা বলছিলেন শামসুন্নাহার। ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছিলেন তিনি। একজন বৃদ্ধকে পেলেন পথে। তৈরি পোশাক কারখানার এক কর্মীর সাইকেল মেরামত করছিলেন তিনি। শামসুন্নাহার যতই বলেন, ‘চাচা, এখন তো বাইরে থাকা যাবে না। শরীর খারাপ করবে। বাসায় যান।’ তিনি ততই আরেকটু সময় বাড়ানোর অনুরোধ করতে থাকেন। শামসুন্নাহার তাঁকে ঘরে পাঠিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু স্বস্তি পাননি। বারবারই মনে হচ্ছিল, হয়তো ওই বৃদ্ধ দুমুঠো ভাত জোটাতে পথে নেমেছিলেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। প্রস্তাব দেন, তাঁরা রেশন হিসেবে যা পান, সেখান থেকেই দরিদ্রদের খাদ্যের সংস্থান করবেন। না হলে মানুষকে বাসায় রাখা যাবে না। সবাই তাঁর এই প্রস্তাবে সম্মত হন। প্রথমেই তিনি ওই বৃদ্ধকে খুঁজে বের করে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। খোঁজখবর নিয়ে দুস্থ মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলে বেশ অনেক দিন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁর বক্তব্যও তুলে ধরেছিলেন স্পষ্ট করে। মে মাসে, ঈদের আগে বেতন-বোনাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেক কারখানা দিচ্ছিল না। শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়েছিল। তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলো খোলার ঘোষণা দেওয়ায় যেসব শ্রমিক বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁরা দূরদূরান্ত থেকে কাজের জন্য গাজীপুরে ফিরতে শুরু করলে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। শামসুন্নাহার বলছিলেন, ‘দূর থেকে এক হাতে ব্যাগ আর কোলে বাচ্চা নিয়ে নারী শ্রমিকেরা গাজীপুরে আসেন। এমনও হয়েছে, আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে বাড়িওয়ালা তাঁকে ঢুকতে দেননি। আমরা শ্রমিকের পক্ষ হয়ে বাড়িওয়ালাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’

এ তো গেল বাইরের সুরক্ষার বিষয়, নিজেদের সুরক্ষার জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন? শামসুন্নাহার বলছিলেন, ফোর্সে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসা ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা, তাঁকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা আর পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছেন। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলে গান গেয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন, ফুল আর উপহার তুলে দিয়েছেন হাতে। তাঁর বাসায় ১৩ জন কর্মী। পুলিশ লাইনস থেকে খাবার আসত। করোনার সময়ে তাঁর বাসায় সবার জন্য রান্না হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া মেয়েটা গা ঘেঁষে না শুলে ঘুমোতে পারে না। সারা দিন বাইরে দায়িত্ব পালন শেষে যখন ফিরতেন, অনেকটা সময় গাড়িতে বসে থেকে তারপর ঢুকতেন ঘরে। গোসল করে, সব ধুয়েমুছে তারপর মেয়ের সঙ্গে সারতেন আলিঙ্গন পর্ব।

এখন মনে মনে একটা তৃপ্তি বোধ করেন শামসুন্নাহার। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁর বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু সবাই সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়নি। এমন দুর্দিনে এটাই বড় অর্জন।





আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/deshytvn/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ