সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরে জাহাজজটের কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি খরচ বেড়েছিল। সঠিক সময়ে জাহাজ আসতে না পারায় ৪০ ফুট দীর্ঘ রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার সংকট ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেও। কিন্তু মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার বাড়তে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিশেষ করে হিমায়িত পণ্যভর্তি ফুল কন্টেইনার লোড (এফসিএল) অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। আমদানি বাড়লেও সে হারে খালাস না হওয়ায় রমজান সামনে রেখে কন্টেইনারজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য আগাম প্রস্তুতি হিসাবে এফসিএল পণ্য খালাস না নিলে জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে জট নিরসনের কারণে আটকে থাকা পণ্য একসঙ্গে আসায় আমদানি বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের এমন অজুহাত মানতে নারাজ বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মূলত রজমানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানি করে বন্দরে রাখা হচ্ছে। বন্দর ইয়ার্ডকে গুদাম হিসাবে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক ফায়দা নিতেই দ্রুত খালাস নেওয়া হচ্ছে না। হিমায়িত এসব কন্টেইনারে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, পেঁয়াজ-রসুন-আদা, খেজুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডে ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস রাখার জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে হিমায়িত
কন্টেইনার ৩ হাজার। গতকাল রবিবার পর্যন্ত এফসিএল কন্টেইনার প্রায় ৩ হাজার ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে মোট ৩৮ হাজার ৪৩১টি কন্টেইনার ছিল। আগের দিন শনিবার ছিল ৩৯ হাজার ৮২৬টি। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য খালাস না বাড়লে চলতি সপ্তাহে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি কন্টেইনার জমে যাবে। এতে তৈরি হবে কন্টেইনারজট।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আমাদের সময়কে বলেন, এফসিএল কন্টেইনার খালাস বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ১ মার্চ থেকে জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে ব্যবসায়ীরা সময় চাইলে ৮ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য খালাস না নিলে জরিমানা দিতে হবে। বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কর্তৃপক্ষ যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে।
জরিমানা আরোপকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক বলেন, খাদ্য আমদানি করে বন্দর ইয়ার্ডকে গুদাম হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আরও আগে উপলব্ধি করে জরিমানা করলে আমদানিকারকরা দ্রুত খালাস নিত।
জানা গেছে, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান এবং বাজেটকে সামনে রেখে পণ্য আমদানি বেড়ে যায়। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামের আশায় সঠিক সময়ে পণ্য খালাস না করে বন্দরে রেখে দেন। আবার বাজেটের আগে আমদানি করা পণ্যও খালাস না নিয়ে বন্দরে রাখেন। আর বাজেটে ওইসব পণ্যের সুবিধা দেখে খালাস করতে চান।
সূত্র জানায়, রমজান মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে রমজানের বড় এই বাজার ধরতে কয়েক মাস আগে থেকেই পণ্যগুলো আমদানি শুরু করে ব্যবসায়ীরা। পচনশীল এসব পণ্য গুদামে না নিয়ে বন্দর থেকেই বিক্রির কৌশল নেন তারা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বন্দর জেটিতে মোট ১৮টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে ১১টি কন্টেইনার, চারটি সাধারণ কার্গো, একটি খাদ্য ও দুটি সিমেন্টে ক্লিংকারবাহী। বহির্নোঙরে ছিল ৭৯টি জাহাজ।