২০১২ সালের কথা। ‘করপোরাল পানিশমেন্ট’ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছিলাম। তখনই অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলাম যে ‘করপোরাল পানিশমেন্ট’-এর স্বগোত্রীয় কোনো বাংলা শব্দ নেই। তার মানে সুশৃঙ্খল রাখার জন্য যে মারধর ও নির্যাতন, তা যত নির্দয় বা নৃশংসই হোক, তাকে আমরা কখনোই বিপজ্জনক কিছু ভাবিনি। অসংগত, অনৈতিক বা অন্যায় কিছুও ভাবিনি। নইলে বাংলা একটি শব্দ কেন থাকবে না? বিভিন্ন রকমের বিদ্যায়তনে শিক্ষার্থীদের মারধর করা বা শারীরিক শাস্তি দেওয়ার প্রথা শত শত বছর ধরেই চালু রয়েছে।
এই কয়েক শ বছরে হাজার হাজার ব্যাকরণবিদ ভাষার চর্চা করেছেন। একজনও মনে করেননি জুতসই একটি বাংলা শব্দ দরকার? সব রকমের বিদ্যায়তনিক নির্যাতনকেও শুধুই ‘শাস্তি’ বা ‘পানিশমেন্ট’ বলা হচ্ছিল। ‘শাস্তি’ আদালতি পরিভাষা। এটি কার্য হলে কারণ ‘অন্যায়’। অর্থাৎ অন্যায় করেছে, তাই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যায়তনে শিশুদের নির্যাতনকে বৈধতা দেওয়াই আছে। সামাজিক বৈধতা আদালতি বৈধতার চেয়ে শক্তিশালী। আমাদের গবেষণার সময়ও অভিভাবকদের বেশির ভাগই বলছিলেন, মারধরের ভয় না থাকলে শিশুরা দুষ্টুমিই বেশি করবে, পড়াশোনায় মন দেবে না ইত্যাদি।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম ‘চিলড্রেন অ্যাক্ট’ হয়। কিন্তু তাতে করপোরাল পানিশমেন্ট থেকে শিশুকে রক্ষার কোনো বিধান ছিল না। ১৯৭৬ সালে ‘দ্য চিলড্রেনস রুলস’-এ-ও এ ধারণা অনুপস্থিত যে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের মাধ্যমে শাস্তিদান আদৌ কোনো সমস্যা। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করে। এ সনদের ১৯ ও ৩৭ ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল যে শিশুদের কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। শৃঙ্খলায় আনার জন্যও নয়। উল্লেখ আছে যে (বড়দের মতো) শিশুরাও একই রকম সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।