মিয়ানমারজুড়ে মোবাইল ডেটা নেটওয়ার্ক কাজ না করায় সোমবার দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির শুনানি বাতিল করা হয়েছে। ছয় সপ্তাহ আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে আটক করে জান্তা সরকার।
গতকাল রোববার ছিল জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সবচেয়ে বেশি রক্তাক্ত দিন। এদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ৪৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। পর্যবেক্ষণ সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১২০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আগের জান্তা সরকারের আমলে ১৫ বছরের বেশি সময় গৃহবন্দী থাকা অং সান সু চিকে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রাজধানী নেপিডোতে ভিডিও শুনানিতে হাজির করার কথা ছিল। তবে তাঁর শুনানি ২৪ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সু চির আইনজীবী খিন মং ঝাও।
আইনজীবী খিন মং ঝাও বলেন, ‘এখানে কোনো ইন্টারনেট নেই। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। আমরা ভিডিও কল করতে পারিনি।’
কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ, সকালে নেটওয়ার্ক খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানায়, সোমবার দিনের বেলায়ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ ছিল।
সু চির বিরুদ্ধে অন্তত চারটি অভিযোগ এনেছে জান্তা সরকার। অননুমোদিত ওয়াকিটকি রাখা, করোনাভাইরাস রোধে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করা, টেলিকমিউনিকেশন আইন ভঙ্গ করা এবং জনগণকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় সু চির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী অবৈধভাবে ছয় লাখ ডলার অর্থ ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ গ্রহণের অভিযোগও এনেছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও সু চির আইনজীবী এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে গতকালের বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়া ও সুয়েপিয়েথা এলাকায় মার্শাল ল জারি করা হয়েছে। তবে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রাণহানির পরদিন আবারও রাস্তায় নেমে এসেছেন বিক্ষোভকারীরা। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থীরা জানিয়েছেন, জান্তার বুলেটের মুখে তাঁরা দমছেন না।
গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল বিজয় পায়। তবে দেশটির সেনাবাহিনী এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান করে সেনাবাহিনী। তারা সু চিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে সু চিসহ দেশটির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে। এক বছরের জন্য মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী। সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই মিয়ানমারে বিক্ষোভ শুরু হয়। হুমকি-ধমকি, দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার, গুলি সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা সেনাশাসনের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ করে আসছেন।