শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় চাঞ্চল্যকর আমেনা বেগম হত্যা মামলায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নিহতের পরিবার ও ইসলামপুর ইউনিয়নবাসী।
আজ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শরীয়তপুর শহরের সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে নিহতের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বামী নজরুল ইসলাম মাদবর, দেবর সজল মাদবর, জা মাজেদা বেগম, দুই ননদ সাহানা বেগম ও রাজিয়া বেগম মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নাটকীয় কায়দায় হত্যা করে বোনকে। বিয়ের পর থেকেই সজল, মাজেদা, সাহানা ও রাজিয়া চায়নি নজরুলের সঙ্গে আমার বোন সংসার করুক। সেজন্য তারা নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। আমার বোনের নামে তার স্বামীর কাছে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমেনাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে নজরুল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করি, কিন্তু এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। আমার বোনকে হত্যা মামলায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
মানববন্ধনে আসা ইসলামপুর ইউনিয়নবাসীরা জানান, ‘আমেনাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় দ্রুত ফাঁসি দেয়া হোক।’
এ সময় নিহত আমেনা বেগমের ছেলে নয়ন মাদবর, ভাই সুলতান মাদবর, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা, মহিলা মেম্বার আমেনা বেগম, সাবেক মেম্বার আলমগীর কবিরাজসহ পরিবারের সদস্য ও ইসলামপুর ইউনিয়নের তিন শতাধিক নারীসহ ইউনিয়নবাসী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৩ বছর আগে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হোসেন মাদবরের ছেলে নজরুল ইসলাম মাদবরের সঙ্গে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের গঙ্গেসকাঠি গ্রামের আজিজ আলী মাদবরের মেয়ে আমেনা বেগমের। নয়ন মাদবর নামে তাদের ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আমেনাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন স্বামী নজরুল। হত্যার সময় ও পরে ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। ওই সময় স্ত্রীর লাশ খাটের ওপর তোশক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখান। এক পর্যায়ে গান গাইতে দেখা যায় নজরুলকে। একইদিন নজরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে নজরুলসহ পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত আমেনার বড় ভাই সুলতান মাদবর। ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু চার্জশিটে নজরুলকে একমাত্র আসামি দেখিয়ে বাকি চারজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডামুড্যা থানার এসআই মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘নিহত আমেনা বেগমের পরিবার পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে। তাদের মধ্যে আমেনার স্বামী নজরুল ছাড়া কারো বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ কারণে বাকি চারজনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির