কুড়িগ্রামের মজিদা আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আতাউর রহমানের ডান হাত রক্ষা করতে পারেননি চিকিৎসকেরা। এখন প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বাঁ হাতটি রক্ষার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সন্ত্রাসীদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এই শিক্ষকের দুই পায়েও অস্ত্রোপচার লাগবে।
গত মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় হামলার শিকার ওই শিক্ষক এখন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।
গতকাল বুধবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রথম আলোর কাছে হামলার বর্ণনা দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য এবং কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ী এলাকার সাধারণ মানুষের বয়ানে উঠে এসেছে ওই এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা ‘হাতকাটা বাহিনীর’ নিষ্ঠুরতার কথা।
১০ বছর আগে যুবলীগের এক কর্মীর হাত কেটে এই দুর্বৃত্তরা ‘হাতকাটা বাহিনী’ নামে পরিচিতি পায়। সেই থেকে এই বাহিনী কাঁঠালবাড়ী ও আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আতাউর রহমানের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ডান হাতটি সংরক্ষণ করে ছয় ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে আসতে পারেননি তাঁর স্বজনেরা। তাই হাতটি জোড়া লাগানো যায়নি। তাঁর বাঁ হাতটি রক্ষার চেষ্টা চলছে। টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।
আতাউর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার তিনি ও তাঁর সহকারী আনিসুর রহমান বাড়ি থেকে রওনা হয়ে কুড়িগ্রাম শহরে যাচ্ছিলেন। পালপাড়া এলাকার সড়কের একটি বাঁকে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আট–নয়জন যুবক। দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রেক কষলে মোটরসাইকেলসহ মাটিতে পড়ে যান। তখন মেহেদী হাসান ওরফে বাঁধন, রশিদ, সোহেল, নাজমুল, রুবেল, আরিফুল ও শামীম চাপাতি আর চায়নিজ কুড়াল দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রক্তাক্ত হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকলে ওই যুবকেরা চলে যান। এরপর আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আতাউর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক এবং জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর বাবা আলতাফ হোসেন চৌধুরী ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। ওই ইউনিয়নের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আতাউর। তিনি বলেন, বাবার জায়গায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সেখানকার বর্তমান চেয়ারম্যান খয়বর আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা বারবার তাঁর ওপর হামলা চালাচ্ছেন। মঙ্গলবার যাঁরা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন, তাঁরা সবাই ‘হাতকাটা বাহিনীর’ সদস্য। এঁরাই গত মাসে তাঁর বাড়িতে গুলি করেছেন, ভাঙচুর চালিয়েছেন। তখন মামলা করার জন্য কুড়িগ্রাম সদর থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরিয়ে দেন।