• শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
সাংবাদিককে রেল কর্মকর্তার হুমকির প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ শারীরিক চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে ডিপজল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত বাগেরহাটে নষ্ট হচ্ছে জমিদার রায় বাহাদুরের বাড়ি বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় ওষুধ ব্যবসায়ী নিহত, শিক্ষক আহত রমজান উপলক্ষে চাল ব্যবসায়ীর স্বস্তির অফার রমজানের প্রথম সন্ধায় জমজমাট‌ চন্দ্র-শুক্রের মহাজাগতিক মিলনের দৃশ্য চট্রগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ফুটপাত দখল মুক্ত করল ডবলমুরিং থানা পুলিশ দারুল ইরফান একাডেমীর দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘ভাগ্য’ দিয়ে তেলেসমাতি দেখানো চিত্রনায়ক মুন্নার জন্মদিন




চীনবিরোধী আওয়াজ তুলে বাইডেনের এশিয়া প্রবেশ

Reporter Name / ১৪৯ Time View
Update : সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১




মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে তাঁর পূর্বসূরি ডেমোক্র্যাটদের পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না, সেই বার্তা নিয়ে জাপান ঘুরে গেলেন নতুন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টোনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। টোকিওতে তাঁরা তাঁদের দুই জাপানি প্রতিপক্ষ—পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নোবুও কিশির সঙ্গে টু প্লাস টু নামে পরিচিত নিরাপত্তা বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এটা ছিল জাপানি প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রথম সরাসরি বৈঠক। ফলে এশিয়ায় কোন নীতি বাইডেন প্রশাসন গ্রহণ করতে যাচ্ছে, তার পরিষ্কার কিছু আভাস এর মধ্য দিয়ে পাওয়া গেছে। বৈঠক এবং যৌথ বিবৃতি থেকে এটা পরিষ্কার যে বিশ্বজুড়ে তাদের যে স্বার্থ, চীনা উত্থানকে তার পরিপন্থী বিশাল এক হুমকি হিসেবে দেখছেন তাঁরা। সেই হুমকি মোকাবিলায় ভবিষ্যতে তাঁরা দৃঢ় অবস্থান নেবেন। চীনের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি ও বাগাড়ম্বরের মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়াকে অনেকেই শুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য করছেন না। এ অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের সব সময় বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। কোরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ক্ষমতাসীন থাকার সময়। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও একই ধারা। আফগান যুদ্ধের প্রথম ডঙ্কা কিন্তু বাজিয়েছিলেন জিমি কার্টার। ইরাক যুদ্ধ জর্জ ডব্লিউ বুশ শুরু করলেও ক্ষেত্রটা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন বিল ক্লিনটন, সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ভান্ডার গড়ে তোলার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপনের মধ্য দিয়ে। সিরিয়া ও লিবিয়ার চূড়ান্ত অধঃপতনের দিকে যাত্রা বারাক ওবামার সময় থেকে। ফলে ক্ষমতায় ফিরেই ডেমোক্র্যাটরা যে পুরোনো পথে হাঁটতে শুরু করবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে অবাক হতে হয় এবার এদের নতুন শত্রু খুঁজে বের করে ময়দানে নেমে যাওয়ার দ্রুততা এবং বাগাড়ম্বরের তীব্রতা দেখে।

টোকিওতে বৈঠক শেষ করে এন্টোনি ব্লিঙ্কেন এবং লয়েড অস্টিন দুজনেই বলেছেন, অঞ্চলজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখন চ্যালেঞ্জের মুখে এবং মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও মুক্ত প্রশান্ত মহাসাগরের ধারণা এগিয়ে নেওয়ায় কাজ করবে। তাঁরা আরও বলেছেন, চীন নিজের লক্ষ্য অর্জনে অব্যাহত ভীতি প্রদর্শনের পাশাপাশি আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে, প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র এর জবাব দেবে।

বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে চার মন্ত্রী শিনজিয়াং অঞ্চলে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে দেশটির অবৈধ মালিকানা দাবি এবং চলমান স্থিতাবস্থা বদলাতে চীনের গৃহীত একতরফা পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে চীনের আচরণ বিদ্যমান অন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, জোট ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে।

এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের অন্যান্য বিষয় উত্থাপিত হলেও টু প্লাস টু বৈঠকের অধিকাংশ সময় ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল চীন। চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্ররা কতটা উদ্বিগ্ন, এই সময় বণ্টনেই তা পরিষ্কার। একক একটি দেশকে লক্ষ্য করে এতটা আগ্রাসী বক্তব্য ও বাগাড়ম্বর আগে সচরাচর দেখা যায়নি।

অন্যদিকে টোকিওর বৈঠক নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটাই সংযত। বৈঠক শুরু হওয়ার আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছিলেন, জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের উচিত হবে না তৃতীয় কোনো পক্ষের স্বার্থহানি করা কিংবা তৃতীয় কোনো দেশকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে নেওয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে সে রকম কোনো উপদেশে কান দেবে না, তার আভাস গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কোয়াড নামে পরিচিত চার দেশের শীর্ষ আলোচনাতেই পাওয়া গেছে।

সেই চার দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই জোটের লক্ষ্যও চীন এবং তার মিত্র। তবে চীনকে সামলাতে কোন পদক্ষেপ তারা নেবে, এই প্রশ্নে এখনো কোনো অভিন্ন অবস্থানে তারা পৌঁছাতে পারেনি। চীন মধ্যপ্রাচ্য কিংবা লাতিন আমেরিকার কোনো দেশ নয়, এই হিসাব জোটের অংশীদারেরা সময়মতো করে নিলে সবাই উপকৃত হবে। ফলে সামরিক ভাবনাচিন্তার দিক থেকে চীনকে ঘিরে ফেলার কোনো ধারণা এরা করলে তা হবে মস্ত বড় ভুল।

এ ছাড়া তেমন কিছু করতে হলে আগে থেকেই ন্যাটোর মতো একটি সামরিক কাঠামো দাঁড় করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন, সহজে যে কাজ হওয়ার নয়।

কোয়াডে যোগ দিলেও সাংবিধানিক কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে জাপানের পক্ষে খুব বেশি দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে না। অন্যদিকে ভারতকেও ভাবতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শত্রুকে কবজা করার ধারণা কতটা যুক্তিসংগত। বিশ্বের আর সব দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন কোনো দেশ চীন নয়। নানা রকম তৎপরতার মধ্যে গত দুই দশকে নিজের বিশাল এক প্রভাব বলয় গড়ে তুলেছে চীন। সমরশক্তির দিক থেকেও অবজ্ঞার পাত্র নয় চীন। তাই বাগাড়ম্বর করে চীনকে কোণঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা হবে নিতান্তই বালসুলভ ভাবনা, উল্টো সমগ্র বিশ্বকে এটা হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।

এ কারণেই টু প্লাস টু কিংবা কোয়াড, যেখানেই চীনকে নিয়ে আলোচনা চলুক, উত্তেজনা বৃদ্ধির বাইরে অন্য কোনো ফলাফল এ থেকে পাওয়া যাবে না। মানবপ্রগতির চিন্তা মাথায় নিলে সবাই এটা পরিষ্কার দেখতে পাবেন যে চীনকে বাইরে রেখে নয়, বরং সব রকম আলোচনা কাঠামোর ভেতরে রেখেই কেবল ইতিবাচক অবদান রাখা সম্ভব, যা শুধু অঞ্চল না, সারা বিশ্বের জন্যই উপকারী হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন সে রকম কোনো তৃতীয় পথে যাত্রার সম্ভাবনা নিয়ে এখনো পর্যন্ত মনে হয় একেবারেই চিন্তিত নয়। ফলে ভবিষ্যতে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

মনজুরুল হক শিক্ষক ও সাংবাদিক





আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/deshytvn/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ