• শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
গোসাইরহাটে ঢুবার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু গোসাইরহাটে চেয়ারম্যান সমর্থকদের বিরুদ্ধে কৃষকদের ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ বাকেরগঞ্জে জাতীয় পার্টির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রাজশাহীর মতিহার থানা এলাকার হোয়াইট কালার মাদকের গড ফাদার ‘অলি’ পোরশায় মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রশাসনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়নি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাকেরগঞ্জ এর ভরপাশায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ টি কয়েক গ্রামের মানুষের চলাচল, অনুপোযোগী রাস্তাঘাট! নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের কমিটি ঘোষনা বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত -১ গুরুতর আহত -১ মডেল তাসনিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আজ গীতিকবি মিলন খানের জন্মদিন




সুয়েজ খালের বিকল্প নিয়ে ফের কথা, আলোচনায় ইসরায়েল রুট

Reporter Name / ১৪৫ Time View
Update : শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১




বিশ হাজার কন্টেইনার ভর্তি এভার গিভেন নামের দানবাকৃতি জাহাজটির মাথা যখন ২৩ মার্চ সুয়েজ খালের তীরে বালিতে আটকে যায়, তার পরিণতি যে কত গুরুতর হতে পারে মিশর হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে তা বোঝেনি।

কিন্তু পরের ছয় দিন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চেষ্টায় জাপানি মালিকানাধীন জাহাজটিকে উদ্ধার করে বিশ্ব বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি চালু করার পর পাহাড় সমান লোকসানের হিসেব-নিকেশ শুরু হয়েছে।

এভার গিভেন জাহাজটি আটকে রেখে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে মিশর। যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। জাহাজটি চালানোতে কোনো ভুল হয়েছিল কিনা, তা দেখা হচ্ছে। ক্যাপ্টেনকে জেরা করা হচ্ছে।

 

সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার করেছে যে তদন্তে সহযোগিতা না করলে জাহাজের ক্রুদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হবে।

শুধু মিশর নয়, শত শত কোটি ডলার লোকসানের ভাগিদার হয়েছে ডজন ডজন দেশ এবং হাজার হাজার ব্যবসায়ী।

এর কারণ লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সংযোগকারী ১২০ মাইল দীর্ঘ এই খাল দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়। বিশেষ করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ইউরোপের বাণিজ্যের একটি লাইফ-লাইন হলো মিশরের এই খালটি।

মিশরের একটি টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ওসামা রাবি বলেছেন, জাহাজটিকে ভাসানোর খরচ এবং ছয় দিন ধরে খালটি বন্ধ থাকার জন্য ক্ষতির পরিমাণ “১০০ কোটি ডলার বা তারও বেশি হতে পারে।“

জাপানি জাহাজ মালিকের কাছ থেকে এই ক্ষতি দাবি করা হবে কিনা, তা অবশ্য খোলাসা করেননি রাবি।

কিন্তু টাকার এই লোকসানের চেয়ে অন্য আরেকটি বিষয় এখন হয়তো মিশরের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সেটি হলো, দুর্ঘটনার পর নতুন করে সুয়েজ খালের বিকল্প একটি খালের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা শুরু।

বিকল্প খালের ম্যাপে ইসরায়েল

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বিজনেস ইনসাইডার নামে একটি পত্রিকায় ১৯৬৩ সালের একটি গোপন সরকারি নথি প্রকাশ করা হয় যেখানে সুয়েজ খালের বিকল্প হিসাবে ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে একটি খাল তৈরির পরিকল্পনার কথা ছিল। আমেরিকার বাণিজ্য দপ্তরের গোপন ওই নথি ১৯৯৬ সালে আংশিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

আমেরিকার ওই গোপন পরিকল্পনায় ১৬০ মাইল লম্বা একটি খাল খননের জন্য ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমির তলায় ৫২০টি পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণ করার কথা বলা হয়েছিল।

বিজনেস ইনসাইডারের রিপোর্টটি বিশেষ করে ইসরায়েলের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তেমন একটি খাল তৈরির সম্ভাব্যতা নিয়ে ইসরায়েলি মিডিয়ায় বিশ্লেষণ-মন্তব্য শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে লন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার তাদের এক রিপোর্টে ব্রিটেনের সরকারী সূত্র উদ্ধৃত করে বলছে যে সুয়েজ খালে দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল এবং মিশরের সীমান্ত দিয়ে নতুন একটি খাল তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে জাতিসংঘের বাণিজ্যিক-রুট সম্পর্কিত কমিটিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

গার্ডিয়ানের রিপোর্ট বলছে, কয়েক বছর আগে জাতিসংঘ টানেল তৈরিতে বিশেষজ্ঞ একটি কোম্পানিকে দিয়ে সুয়েজের বিকল্প একটি খালের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল, যেখানে ওই কোম্পানি বলেছিল যে পাঁচ বছরে এমন একটি কৃত্রিম খাল তৈরি করা সম্ভব।

লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ এবং তা সম্ভব না হলে বিকল্প একটি জলপথ তৈরির পরিকল্পনা ইসরায়েল বহুদিন ধরেই করছে। আর তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমেরিকা এবং পশ্চিমা অনেক দেশের।

“১৯৫৬ সালে ইসরায়েল সুয়েজের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সমর্থন নিয়ে মিশরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। বাস্তবতার কারণে হয়তো বিষয়টি বারবার চাপা পড়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে ইসরায়েল কখনই সরেনি,“ বিবিসি বাংলাকে বলেন সামি হামদি।

এইলাট রেলপথ

খাল তৈরির বিকল্প হিসাবে ইসরায়েল সরকার ২০১২ সালে লোহিত সাগরে এইলাট বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগরে হাইফা বন্দর পর্যন্ত একটি রেললাইন প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরিকল্পনা ছিল – এশিয়া থেকে জাহাজ এসে তাদের পণ্য এইলাটে খালাস করবে, তারপর পণ্য ট্রেনে করে হাইফায় নিয়ে ইউরোপ-গামী জাহাজে তোলা হবে।

কিন্তু জাহাজ ব্যবসায়ীরা দুইবার মাল ওঠানামার ঝামেলায় রাজী হবে কি-না, এবং সেই সাথে এইলাট বন্দর বাড়তি কর্মকাণ্ডের চাপ সহ্য করতে পারবে কি-না, সেই সন্দেহ থেকে ওই পরিকল্পনা চাপা পড়ে যায়।

সামি হামদি বলেন, আরব বসন্তের পর মিশরের আনুগত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমেরিকার এবং সেই সাথে ইসরায়েলের মধ্যে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

“এখন মিশরের যে সরকার, তারা আমেরিকার অনুগত। কিন্তু এই আনুগত্য কতদিন স্থায়ী হবে এবং ভবিষ্যতে সুয়েজ খালকে মিশর কীভাবে ব্যবহার করবে তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই গেছে।“

এ কারণে, সামি হামদি বলেন, ২০১৬ সালেও সুয়েজ খালের বিকল্প জলপথ তৈরি নিয়ে জোরেশোরে কথা উঠেছিল, কিন্তু “ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং মিশরের স্পর্শকাতরতার“ কথা বিবেচনা করে আমেরিকা বিষয়টি চাপা দিয়ে দেয়।

এরপর, গত বছর যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, তখন আবারও ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে সুয়েজ খালের বিকল্প একটি খালের কথা ওঠে।

সামি হামদি বলেন, “ইউএই ওই খাল তৈরিতে বিনিয়োগ করার কথাও বলে। সাথে সাথে মিশরে লেখালেখি শুরু হয় যে ইউএই এই বিনিয়োগ করলে তা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে। পরে আস্তে আস্তে চুপ করে যায় ইউএই।“

গত সপ্তাহে ছয় দিন ধরে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকার পর আবার উঠতে শুরু করেছে বিকল্প খালের কথা।

“ইসরায়েল হয়তো এখন মনে করছে এই পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং গ্রহণযোগ্যতার যথার্থ সুযোগ তৈরি হয়েছে,“ বলেন মি. হামদি।

তার কথায়: “পুরোপুরি ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে না নিয়ে বরং মিশর-ইসরায়েল সীমান্ত দিয়ে বিকল্প একটি খাল কাটার যে কথা হচ্ছে সেটি হয়ত একটি আপোষ ফর্মুলা। আসলে মূল লক্ষ্য হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথটির ওপর মিশরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা।“

“একটি কথা মনে রাখতে হবে যে সুয়েজের বিকল্প যে খাল ইসরায়েল চায়, তার পেছনে অর্থনৈতিক বিবেচনার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করছে ইসরায়েলের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ।”

বিকল্প খাল, মিশর এবং আরব বিশ্ব

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মিশর সুয়েজের বিকল্প কোনো খাল তৈরিতে রাজী হবে কি-না?

সুয়েজ খাল থেকে বছরে মিশরের প্রায় ৬০০ কোটি ডলার আয় হয়, যা দেশটির জিডিপির দুই শতাংশের মতো।

তবে সামি হামদি মনে করেন, মিশরের কাছে সুয়েজ খালের অর্থনৈতিক গুরুত্বই একমাত্র বিবেচ্য নয়। আঞ্চলিক ইস্যুতে প্রভাব তৈরির ক্ষেত্রে যতটুকু অস্ত্র মিশরের রয়েছে, সুয়েজ খাল তার অন্যতম। অ।মেরিকা যেসব কারণে মিশরকে গুরুত্ব দেয়, সেটির পেছনেও রয়েছে সুয়েজ খাল।

“সুতরাং বিকল্প একটি খাল এবং এই জলপথের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া হবে মিশরের জন্য একটি বিপর্যয়। মধ্যপ্রাচ্যে মিশরের প্রভাব এবং গুরুত্ব দারুণভাবে মার খাবে।“

এ কারণেই গত সপ্তাহের সঙ্কট দ্রুত নিরসনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল মিশর। একাধিক দেশ থেকে রাতারাতি বিশেষজ্ঞ উড়িয়ে আনা হয়েছিল। সারাক্ষণই আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে তারা জানিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে কতটা গুরুত্ব দিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সামি হামদি মনে করেন, সুয়েজ খালের ওপর মিশরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে শুধু মিশর নয়, আমেরিকার ওপর চাপ তৈরির অবশিষ্ট যে গুটিকয় অস্ত্র আরব বিশ্বের রয়েছে, তাও ভোঁতা হয়ে যাবে। সূত্র: বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত





আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/deshytvn/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ