নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর একটি রিসোর্টে গতকাল শনিবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সময় তাঁকে এক নারীসহ আটক করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পর কয়েক হাজার হেফাজতকর্মী ‘রয়েল’ নামের ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মাওলানা মামুনুলকে মুক্ত করে নিয়ে যান। এ সময় হেফাজতকর্মীরা রিসোর্টে ভাঙচুরও করেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নারীসহ মামুনুলের সেখানে অবস্থানের খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাঁর কক্ষটি ঘেরাও করেন। পুলিশ তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। মাওলানা মামুনুল হক দাবি করেছেন, সঙ্গে থাকা নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁকে নিয়ে অবকাশ যাপন করতে মামুনুল ওই রিসোর্টে যান। সেখানে কিছু লোকজন তাঁকে নাজেহাল করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে রয়েল রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষে তাঁকে অবরুদ্ধ করা হয়। বিকেলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে মামুনুলকে ঘিরে রেখে কয়েকজন মিলে এক নারীর পরিচয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে দেখা যায়। এ সময় মামুনুল সঙ্গে থাকা নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মী সন্ধ্যা ৬টার দিকে রয়েল রিসোর্ট ঘিরে ফেলে। তাঁরা সেখানে হামলা চালিয়ে মামুনুলকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে প্রথম দফায় ব্যর্থ হন। পরে আবার হামলা চালিয়ে মামুনুলকে তাঁদের কাছে নেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে পাশের একটি মসজিদে নিয়ে যান কর্মীরা। সেখানে মামুনুল কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় হেফাজতকর্মীরা মোগড়াপাড়ার আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রাস্তায় ভাঙচুর ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগানও দিতে থাকেন। সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান বলেন, ‘রিসোর্টে মামুনুল হকের নিরাপত্তার জন্য আমরা যাই। সেখানে হামলা চালিয়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান হেফাজতের কর্মীরা।’
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুক্ত হয়ে মাওলানা মামুনুল বলেন, ‘সাংবাদিক ও পুলিশ আমার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে। আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম।’ মামুনুল হকের দাবি, সঙ্গে থাকা নারীর নাম আমিনা তৈয়ব। তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে নারীসহ অবস্থান করছেন—এমন খবরে স্থানীয় লোকজন ঘেরাও করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মামুনুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন, সঙ্গে থাকা নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা দিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে একটি নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে হেফাজতের কর্মীরা তাঁকে নিয়ে যান।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সফর ঘিরে হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইসলামী পিপলস পার্টি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় এই নেতা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।