আইপিএলের প্রথম মৌসুমের শিরোপা জিতেছিল রাজস্থান রয়্যালস। সেটি সবাইকে কিছুটা অবাক করে দিয়েই। শেন ওয়ার্নের অধীনে রাজস্থানের সেই দলটা আপাতদৃষ্টিতে ছিল সাদামাটাই। কিন্তু সেই দলটাই তাক লাগিয়ে জিতে নিয়েছিল শিরোপা। তবে সেটিই প্রথম, সেটিই শেষ। এরপর একে একে আইপিএলের ১২ মৌসুম পেরিয়ে গেলেও রাজস্থানের কপালে আর শিরোপা জোটেনি। গতবার তো আট দলের মধ্যে অষ্টম হয়েই আইপিএল শেষ করেছিল দলটা।
রাজস্থান সবচেয়ে খারাপটা দেখে ফেলেছে। তাই এবার তাদের উন্নতি হবে, এটাই সবার চাওয়া। রাজস্থানও সে আশাই করছে। বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। কয়েকজন কার্যকরী খেলোয়াড় দলে আনা, অধিনায়ক পরিবর্তন করা, আগের অধিনায়ককে ছেড়ে দেওয়া—শিরোপা জিততে এবার যেন আরও আটঘাট বেঁধে নামছে দলটি। দলে টেনেছে বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকেও।
বলিউড তারকা শিল্পা শেঠির এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে মোস্তাফিজের ভূমিকাটা ঠিক কেমন হবে? দলটার অবস্থাই–বা কেমন? দেখে নিন এক নজরে।
সম্পূর্ণ স্কোয়াড
ব্যাটসম্যান: জস বাটলার, ডেভিড মিলার, যশস্বী জয়সওয়াল, লিয়াম লিভিংস্টোন, মনন বোহরা, আকাশ সিং
পেসার: জফরা আর্চার, মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যান্ড্রু টাই, জয়দেব উনাদকাট, কার্তিক ত্যাগী, চেতন সাকারিয়া
স্পিনার: কেসি কারিয়াপ্পা, ময়ঙ্ক মারখান্ডে
অলরাউন্ডার: বেন স্টোকস, ক্রিস মরিস, শিভাম দুবে, রাহুল তেওয়াতিয়া, রিয়ান পরাগ, শ্রেয়াস গোপাল, মহীপাল লমরোর
উইকেটকিপার: সঞ্জু স্যামসন, অনুজ রাওয়াত
শক্তি
নিঃসন্দেহে রাজস্থান রয়্যালসের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের ব্যাটিং। গতবারের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে ছেড়ে দেওয়ার পরও ব্যাটিং–শক্তি আদৌ কমেছে বলে মনে হচ্ছে না। এবার আগে থেকেই বলা হচ্ছে, দলের হয়ে ওপেন করতে নামবেন দুই ইংলিশ তারকা বেন স্টোকস ও জস বাটলার। এই কৌশল কাজে লেগে গেলে রাজস্থান রয়্যালসকে আটকাতে বিশ্বের যেকোনো বোলিং লাইনআপের ঘাম ছুটে যাবে।
স্টোকস সাধারণত মিডল অর্ডারে খেললেও গতবারও আইপিএলে ওপেন করেছিলেন। গতবার ৮ ম্যাচে ওপেন করে ৪০.৭১ গড়ে ২৮৫ রান করেছিলেন, স্ট্রাইক রেটটাও ছিল চোখধাঁধানো—১৪২.৫০। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি আর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ফিফটিতে প্রমাণ করেছিল, ওপেনিংয়ে নিয়মিত খেললে স্টোকস কেমন আলো ছড়াতে পারেন। এই দুজন ছাড়াও দলের নতুন অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনও ব্যাট হাতে বেশ ভালোই ঝড় তুলতে পারেন। ডেভিড মিলার, লিয়াম লিভিংস্টোন, রিয়ান পরাগ, রাহুল তেওয়াতিয়া ও শিভাম দুবের মতো অলরাউন্ডাররাও প্রয়োজন অনুযায়ী হাত খুলে খেলতে পারেন। গত মৌসুমের শুরুর দিকেই রাজস্থান দেখিয়েছিল, ব্যাটসম্যানদের ফর্ম থাকলে যেকোনো করে ফেলা সম্ভব তাদের পক্ষে।
দলে বেশ কিছু কার্যকরী স্পিনার আছে, যা ফ্র্যাঞ্চাইজিটার স্পিন বিভাগকে শক্তিশালী করেছে। শ্রেয়াস গোপাল, রাহুল তেওয়াতিয়া, কেসি কারিয়াপ্পা, ময়ঙ্ক মারখান্ডে, রিয়ান পরাগ—প্রয়োজনে প্রত্যেকেই কবজির মোচড়ে প্রতিপক্ষের রান আটকে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কবজির স্পিনারদের কদর এখন অনেক বেশি, আর রাজস্থানে সেই শক্তির অভাব নেই কোনো।
দলে অলরাউন্ডারদের উপস্থিতিও রাজস্থানকে শক্তিশালী করেছে, সেটা সেটা স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হোক বা পেস। বেন স্টোকস, ক্রিস মরিস, শিভাম দুবেরা পেস বোলিং করার পাশাপাশি ইনিংসের মাঝে ও শেষ দিকে ব্যাট ঘোরাতেও পারেন বেশ। ওদিকে তেওয়াতিয়া, পরাগ, শ্রেয়াস ঋদ্ধ করেছেন স্পিন অলরাউন্ডার বিভাগকে।
ব্যাট-বল মিলিয়ে দলের বিদেশিদের মানও ঈর্ষণীয়। স্টোকস, বাটলার, আর্চার, লিভিংস্টোন, মিলার, মরিসের প্রত্যেকেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পোড় খাওয়া যোদ্ধা।
দুর্বলতা
রাজস্থানের ব্যাটিং–শক্তি যেমন ঈর্ষা জাগায়, বোলিং–শক্তি ঠিক ততটাই হতাশা বাড়ায়। এমনিতেই পাওয়ার-প্লে কিংবা ডেথ ওভারে রাজস্থানের বোলারদের অকাতরে রান বিলানোর প্রবণতা আজকের নয়। যে কারণে পড়িমরি করে মরিসের মতো ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট বোলারকে দলে এনেছে তারা। দলে স্পিনারদের কমতি না থাকলেও প্রত্যেকেই ডানহাতি লেগ স্পিনার। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কবজির স্পিনারদের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে দেখেই কি না, রাজস্থান একগাদা কবজির স্পিনার কিংবা কবজির স্পিনিং অলরাউন্ডার দিয়ে দল ভরেছে। তেওয়াতিয়া, কারিয়াপ্পা, শ্রেয়াস, পরাগ—প্রত্যেকেই একই ধরনের স্পিনার। একজন আদর্শ অফ স্পিনারের ভূমিকা ভোগাতে পারে দলটাকে।
স্পিন বিভাগ যেমন-তেমন, দলের পেস বিভাগের অবস্থা আরও খারাপ। গতবারই পেস বোলিংয়ের জন্য ইংল্যান্ডের জফরা আর্চারের ওপর বেশ চাপ দিয়েছিল রাজস্থান। এবার হাতের চোটে পড়ে সাইডলাইনে থাকা এই বোলার অন্তত প্রথম কয়েক ম্যাচ মাঠে নামতে পারবেন না। আর ব্যাপারটাই রাজস্থানের পেস-দুর্বলতা আরও প্রকাশ করে দিচ্ছে। তবে আর্চারের অনুপস্থিতি সুবিধা করে দিতে পারে বাংলাদেশের মোস্তাফিজকে। যদিও মোস্তাফিজ নিজেই প্রথম এক-দুই ম্যাচ খেলতে পারবেন না রাজস্থানের হয়ে, কোয়ারেন্টিন নীতির কারণে।
তা সত্ত্বেও আর্চারের অনুপস্থিতি ও বছরের পর বছর ধরে আরেক বাঁহাতি পেসার জয়দেব উনাদকাটের ফর্মহীনতা কপাল খুলে দিতে পারে মোস্তাফিজের। পেস বোলিংয়ের বাকি ভার বহন করার জন্য ক্রিস মরিস, শিভাম দুবে, বেন স্টোকসের মতো দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের ওপরই নির্ভর করবে রাজস্থান। বিশেষ করে আইপিএলের নিলাম ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ক্রিস মরিসের ওপরেই আর্চারের অভাব পূরণ করার দায়িত্ব থাকবে সবচেয়ে বেশি, যাঁকে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি রুপি দিয়ে দলে এনেছে রাজস্থান। যদিও মরিস নিজেও চোটপ্রবণ, দলের বোঝা একা কতটুকু টানতে পারেন, সেটাও দেখার বিষয়।
তবে ব্যাটসম্যান ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার মিলিয়ে রাজস্থানে এত ভালো ভালো বিদেশি আছেন, শেষমেশ মোস্তাফিজকে বেঞ্চেই বসে থাকতে হতে পারে।
দলে কার্যকরী দেশীয় খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতিও ভোগাতে পারে রাজস্থানকে। যশস্বী জয়সওয়াল, কার্তিক ত্যাগী, রাহুল তেওয়াতিয়া, শিভাম দুবে, রিয়ান পরাগ—প্রত্যেকে প্রতিভাধর হলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের মূল একাদশের অংশ কেউই নন। এমনকি অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনও নন। গতবার অধিনায়ক ছিলেন না, হাত খুলে চিন্তামুক্ত হয়ে খেলেছেন। এবার অধিনায়কত্বের বাড়তি বোঝা স্যামসন কতটুকু সামলাতে পারেন, নাকি চাপে ভেঙে পড়েন, সেটাই দেখার বিষয়।
সম্ভাব্য একাদশ: বেন স্টোকস, জস বাটলার, সঞ্জু স্যামসন, যশস্বী জয়সওয়াল, ডেভিড মিলার, ক্রিস মরিস, শিভাম দুবে, রিয়ান পরাগ, শ্রেয়াস গোপাল, রাহুল তেওয়াতিয়া, জয়দেব উনাদকাট/মোস্তাফিজুর রহমান