• বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
মেহেন্দিগঞ্জে চুরি হয়ে যাওয়া সে মসজিদে ড. শাম্মি আহমেদ এর পানি তোলার পাম্প মোটর দান! ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেনা  শর্তে রফিকুল ইসলাম মাদানীর জামিন! উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের ক্ষমতা কেড়ে নিলেন হাইকোর্ট! বাকেরগঞ্জে ৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল সহ ৩ জেলে আটক জাজের হাত ধরে আবার নায়িকার ভূমিকায় শাবনূর! বাকেরগঞ্জে জমি আত্নসাত করতে একজনকে হত্যার চেষ্টা প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে পেশাগত দক্ষতার বিকাশ ঘটে, নড়াইল পুলিশ সুপার বরিশালে ভাসমান বেডে তরমুজ আবাদ বিষয়ক মাঠদিবস অনুষ্ঠিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলে ফসলী জমিতে সেচ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ৩ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম!




নেইমার-এমবাপ্পেকে সামলাতে পারল না বায়ার্ন

Reporter Name / ১৭৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১




২০২০ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালটা এরকম হওয়ার কথা ছিল!

বায়ার্ন মিউনিখ সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়েছে। ম্যাচে ৬৪ শতাংশ বলের দখল তাদের, ম্যাচজুড়ে শট নিয়েছে ৩১টি। এর মধ্যে পিএসজির পোস্টেই ছিল ১২টি। হান্সি ফ্লিকের বায়ার্ন কতটা দাপুটে ছিল, তা সংখ্যায়ই অনেকটা স্পষ্ট।

আর পিএসজি? বায়ার্ন তো সব সময় ‘হাই প্রেস’ করে খেলে, প্রতিপক্ষের অর্ধে গিয়ে বল দখলের চেষ্টায় প্রতিপক্ষকে জ্বালিয়ে মারে! কিন্তু প্রতিপক্ষে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো খেলোয়াড় থাকলে কী হয়, তা-ই টের পেল বায়ার্ন। বাভারিয়ান ক্লাবটির ‘প্রেসিং’ এড়িয়ে যেতে পারলে তাদের ওপরে উঠে আসা রক্ষণরেখাকে কীভাবে ঝাঁকুনি দিতে পারে বল পায়ে নেইমারের চোখধাঁধানো ঝলক আর এমবাপ্পে ভয়ংকর গতি, তার প্রদর্শনী রেখে গেল বায়ার্নের মাঠে কালকের ম্যাচের ৯০ মিনিট।

তাতেই গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে দুই দলের ম্যাচটা যা উপহার দিতে পারেনি, এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ সে রোমাঞ্চের তৃষ্ণা মিটিয়ে দিল! গতবারের ম্যাড়মেড়ে ফাইনালটা কোনো রকমে ১-০ গোলে জিতেছিল বায়ার্ন, তবে এবার ‘বদলা’ নিয়েছে পিএসজি। বায়ার্নের মাঠে গিয়ে জিতেছে ৩-২ গোলে। এমবাপ্পে করেছেন দুই গোল, পিএসজির প্রথম ও তৃতীয়টি। এর মধ্যে প্রথমটিসহ নেইমার করিয়েছেন দুই গোল! নেইমার-এমবাপ্পেকেই তো সামলাতে পারল না বায়ার্ন!

অপ্রতিরোধ্য নেইমার।

একে তো প্রথম লেগে জয়, তারওপর যখন হিসেব করবেন প্রতিপক্ষের মাঠে ‘২৪ ক্যারট সোনা’ দামি ৩টা গোলও করে এসেছেন নেইমাররা। আগামী মঙ্গলবার পিএসজির মাঠে দ্বিতীয় লেগে তাই শুধু জিতলেই চলবে না বায়ার্নের, জিততে হবে অন্তত ২ গোলের ব্যবধানে। এক গোলের ব্যবধানে হলে নিশ্চিত করতে হবে তারা অন্তত ৩ বা তার বেশি গোল করছে! এমবাপ্পে তবু সতর্ক, ‘আমরা আমাদের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছিল, ভাগ্যও পাশে ছিল। তবে এখনো কিছুই নিশ্চিত নয়।’

একদিকে নেইমার-এমবাপ্পে চোখধাঁধানো ফুটবল খেলেছেন, অন্যদিকে বায়ার্ন আক্রমণে চোটের কারণে না থাকা রবার্ট লেভানডফস্কির অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। না হলে গড়ে প্রতি তিন মিনিটেরও কম সময়ে একটা করে শট নিয়েও একটা দল পুরো ৯০ মিনিটে দুই গোল করেছে, তা-ও নিজেদের মাঠে দুই গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর…ভাবা যায়! বায়ার্নের মুলার বলছিলেন, ‘আমরা যত সুযোগ পেয়েছিলাম, তাতে ম্যাচটা আমাদের পক্ষে ৫-৩ বা ৬-৩ ব্যবধানে শেষ হলেও কারও কিছু বলার থাকত না।’

তা যে হয়নি, সে পথে বড় কৃতিত্ব দাবি করবেন পিএসজি গোলকিপার কেইলর নাভাসও। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো গোলকিপার নতুন ক্লাবের হয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগে উজ্জ্বল। লেভার অভাব আর সুপারম্যানের অদৃশ্য লেবাসে থাকা নাভাসের দৌরাত্ম্যে ২০১৯ সালের মার্চের পর থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৯ ম্যাচের অপরাজিত যাত্রাটাও থেমে গেল হান্সি ফ্লিকের দলের।

তা-ও বায়ার্নের ভাগ্য ভালো, মিডফিল্ডার ইয়োশুয়া কিমিখ আরেকবার নিজেকে বিশ্বের তর্কসাপেক্ষে সেরা মিডফিল্ডার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তোলা ফুটবল খেলেছেন। ম্যাচজুড়ে তাঁর একেকটা ক্রস যেন পিএসজির বক্সে এসেছে বিষমাখা তিরের মতন। এই মৌসুমেই পিএসজি ছেড়ে বায়ার্নে যাওয়া স্ট্রাইকার এরিক-ম্যাক্সিম চুপো মোতিং আর বায়ার্নের ঘরের ছেলে টমাস মুলার বায়ার্নের হয়ে গোল দুটি করেছেন, দুটিই কিমিখের দারুণ দুই ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে।

এমবাপ্পে আরেকবার দুর্ধর্ষ।

পিএসজি ম্যাচে অত দাপুটে ছিল না। মাত্র ৩৬ শতাংশ বলের দখল রেখে শট নিতে পেরেছে মাত্র ৬টি, এর মধ্যে অবশ্য পোস্টে ৫টি। কিন্তু এমবাপ্পে-নেইমার যে ছিলেন দুর্ধর্ষ! করোনার কারণে বায়ার্নের মাঠ আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় দর্শক ছিলেন না, থাকলেও অবশ্য ২৮ মিনিটের মধ্যে হয়তো কালকের মতো এমন থমথমেই হয়ে যেত গ্যালারি। ২৮ মিনিটেই যে ২-০ গোলে এগিয়ে পিএসজি! শুরু থেকেই তুষারপাতে মাঠ সাদা হওয়ার জোগাড়, ২৮ মিনিটের মধ্যে বায়ার্নের খেলোয়াড়দের চেহারাও যেন রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে। যতটা না তুষারপাতের কারণে, তার চেয়ে বেশি নেইমার-এমবাপ্পের আঘাতে।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিট। ম্যাচের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করা ধারা ততক্ষণেই দেখা হয়ে গেল—একদিকে নেইমার-এমবাপ্পে ঝলক, অন্যদিকে কিমিখের বিষমাখা ক্রস। কয়েক সেকেন্ড আগে বায়ার্নের কর্নার থেকে কিমিখের ক্রসে চুপো মোতিংয়ের হেড লাগল পিএসজির বারে লেগে। তার কয়েক সেকেন্ড পর উল্টো দিকে গোল! গোলদাতা, এমবাপ্পে। জোগানদাতা, নেইমার।

বায়ার্নের দুই গোলের জোগানদাতা ছিলেন কিমিখ।

বায়ার্ন বক্সের দিকে ছুটে যেতে থাকা নেইমারকে বায়ার্নের চার-পাঁচজন ডিফেন্ডার ঘিরে ধরতে গিয়েছিলেন, সবাইকে নিজের দিকে টেনে এনে নেইমার আলতো করে পাসটা বাড়িয়ে দিলেন ততক্ষণে ডানদিকে ‘ফাঁকা, জনমানবহীন বিরাণভূমি’র মতো জায়গা করে নেওয়া এমবাপ্পের দিকে। ২২ বছর বয়সী ফরাসি স্ট্রাইকার দূরের পোস্টে শট মারবেন—এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন বায়ার্ন গোলকিপার মানুয়েল নয়্যার। এমবাপ্পে ফাঁকি দিলেন, ম্যাচে সেটিই তাঁর শেষবার নয়্যারকে ফাঁকি দেওয়া নয়।

শটটা এমবাপ্পে মারলেন কাছের পোস্টে। কিন্তু এমবাপ্পে দূরের পোস্টে মারবেন ভেবে শরীর একটু সেদিকে হেলে দেওয়া নয়্যারের পক্ষে তা আর ঠেকানো সম্ভব ছিল না। যদিও পোস্ট ছেড়ে নয়্যার ততক্ষণে কেন দু-পা এগিয়ে যাননি, এমবাপ্পের জন্য শট নেওয়ার কোণ কেন ছোট করেননি, সময়ের ফুটবলে সেরা গোলকিপারের আলিসন-এদেরসন-টের স্টেগেনরা যা নিয়মিত করেন, তা একটা প্রশ্ন। তেমনটা করলে হয়তো এমবাপ্পে শট নেওয়ার অত জায়গা কিংবা শটের আগে ভাবার সময় আরও কম পেতেন!

১১ মিনিটে ইউলিয়ান ড্রাক্সলারের গোল বাতিল হলো অফসাইডে। কিন্তু ২৮ মিনিটে অফসাইডের শঙ্কা উড়িয়ে পিএসজির দ্বিতীয় গোল। অফসাইড হলে অবশ্য গোলের পথে নেইমারের চোখধাঁধানো পাসটার অপমান হতো!

মাঝমাঠের একটু সামনে বলটা পেলেন নেইমার। ফুটবলটা তাঁর ডান পায়েই বেশি ভালো ফোটে, কিন্তু কাল ওই মুহূর্তে ওই জায়গা থেকে, বলে প্রথম স্পর্শে বাঁ পায়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড একেবার ভার্নিয়ার-স্কেলে মাপা পাস দিলেন অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বায়ার্ন বক্সে ঢুকে যাওয়া মারকিনিওসের দিকে। এগিয়ে আসা নয়্যারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি নেইমারের স্বদেশি ডিফেন্ডারকে। ২-০ গোলে এগিয়ে পিএসজি, বায়ার্নের মাঠে!

ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বায়ার্নের জন্য লজ্জার হয়ে থাকে কি না, সে-ই তখন শঙ্কা। কিন্তু দলটার নাম বায়ার্ন, বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন, একটা অহম আছে না! তাদের সুবিধা হলো গোলের দুমিনিট পর মারকিনিওস চোট নিয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়াতেও। তাঁর বদলে মিডফিল্ডার আন্দের এরেরাকে নামান পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো, ৪-২-৩-১ ছকে শুরু করা পিএসজি তখন ৩-৩-৩-১। কিন্তু ঝামেলাটা হলো, রক্ষণের তিনে তখন প্রেসনেল কিম্পেম্বের সঙ্গে দুই অনভিজ্ঞ কলিন দাগবা ও আবদু দিয়ালো।

কিমিখের ক্রসে চুপো মোতিংয়ের হেড জড়িয়ে যাচ্ছে জালে।

ওদিকে দিশেহারা বায়ার্নকে ধাতস্থ করতে মিডফিল্ডার লিওন গোরেতস্কাকে উঠিয়ে গতিশীল লেফটব্যাক আলফনসো ডেভিসকে নামান বায়ার্ন কোচ ফ্লিক। আর ডেভিড আলাবাকে রক্ষণ থেকে নিয়ে যান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। ছকটা আগের মতোই ৪-২-৩-১ থাকে বায়ার্নের, কিন্তু বাঁ দিকটাতে আলাবার ভরসা আর ডেভিসের গতির দেখা মিলল। মাঠ বড় করে খেলা শুরু হলো বায়ার্নের। যদিও গোল দুটি এসেছে ডান দিক থেকে আসা ক্রসে।

প্রথমটি ৩৭ মিনিটে। কিমিখের ক্রসে চুপো মোতিংয়ের গোল। বায়ার্নে তখন প্রাণ ফিরেছে। ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া বায়ার্ন সমতায় ফেরে ৬০ মিনিটে, ফ্রি-কিক থেকে কিমিখের ক্রসে এবার হেড মুলারের। এর মধ্যে অবশ্য বেশ জমে উঠেছে ম্যাচ। নেইমার নয়্যারকে ফাঁকা পেয়েও গোল করতে পারেননি, আনহেল দি মারিয়ার শট ফিরেছে গোললাইন থেকে। উল্টো দিকে পিএসজির পোস্টে নাভাসেরও কেটেছে ব্যস্ত সময়, বায়ার্ন উইঙ্গার লিরয় সানে শট না নিয়ে পাস দিয়ে হারালেন সুযোগ। কিন্তু বায়ার্নের দ্বিতীয় গোলের পর মনে হচ্ছিল, এই বুঝি বায়ার্ন দারুণ কোনো ফিরে আসার গল্প লিখল, গত মৌসুমে ফাইনালে ওঠা বাদ দিলে চ্যাম্পিয়নস লিগে ভেঙে পড়ার রেকর্ডে ভারী পিএসজি বুঝি আরেকবার ধাক্কা খেল!

কিন্তু এমবাপ্পের তা সহ্য হলো না। ৬৭ মিনিটে বল নিয়ে বাঁ দিক থেকে ঢুকে গেলেন বক্সে। বায়ার্নের বদলি নামা ডিফেন্ডার জেরোম বোয়াটেং তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে, ‘ডাবল ডাউন’ করতে মাঝমাঠ থেকে নেমে এলেন কিমিখও। উদ্দেশ্য, এমবাপ্পেকে ভেতরে ঢুকতে দেবেন না! এমবাপ্পে ভেতরে ঢুকলেন না। শুধু নিজেকে দুটি সেকেন্ডের জন্য বানিয়ে নিলেন রোনালদো—ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো।





আপনার মতামত লিখুন :

Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/deshytvn/public_html/wp-includes/functions.php on line 5583

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ