‘সীমিত’ শব্দ নিয়ে সংশয়ে ভুগছে বিশ্বের তাবৎ ভাইরাস। এ নিয়ে তারা পৃথকভাবে বিস্তৃত আকারে গবেষণা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে। সম্প্রতি ‘সীমিত’ শব্দের অর্থ পরিপূর্ণভাবে বুঝতে বাংলাদেশে এক সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা।
একটু থামুন-এর ই-মেইল ঠিকানায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা নামের একটি আণুবীক্ষণিক সংস্থা। বিজ্ঞপ্তিটি বেশ কিছুদিন আগেই এসেছিল। তবে ই-মেইলে ভাইরাস থাকায় সন্দেহজনক বিবেচনা করে তা স্প্যামে চলে গিয়েছিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে। পরে সেখান থেকে বিজ্ঞপ্তিটি উদ্ধার করে স্যানিটাইজ করা হয়।
বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা বলছে, গত বছরের শুরুর দিকেই পুরো পৃথিবী ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। সে অনুযায়ী দেশে দেশে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়। তবে বাংলাদেশে আসা প্রতিনিধিদলটি বেশ বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। প্রতিনিধিদলের অন্যতম কাজ হলো, সদর দপ্তরে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাঠানো। গত বছরের প্রতিবেদনেও বাংলায় ‘সীমিত’ শব্দের অর্থ পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি প্রতিনিধিদলের একমাত্র সদস্য। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে এতে কারণ দর্শাতে গিয়ে যে উত্তর ওই প্রতিনিধি দেয়, তাতেই তার অসহায়ত্ব বুঝতে পারে বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা। এরপরই এ নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবরের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
‘সীমিত’ একটি বাংলা শব্দ। অভিধান ঘেঁটে মোর্চা কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, বাংলায় এর প্রতিশব্দ হলো সীমাবদ্ধ করা বা সংযত রাখা। ইংরেজিতে হয় ‘লিমিটেড’। তবে এই অঞ্চলের বাস্তব জীবনে এ শব্দের অর্থের প্রয়োগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে মাথা ঘুরে যায় প্রতিনিধিদলের একমাত্র সদস্যের। প্রাথমিকভাবে গত বছর তার মাথা ঘুরছিল ঘড়ির কাঁটার দিকে। তবে এখন তা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় মোর্চা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বৈশ্বিকভাবে গুরুতর পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্প্যাম ফোল্ডার থেকে পাওয়া ভাইরাসে আক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ নিয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান চালানো শুরু করে বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা। তাতে এ দেশের বিভিন্ন চিত্র নিয়ে ‘সুষ্ঠু’ পর্যালোচনা করা হয়। দেখা গেছে, এ দেশে ছ্যাপাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। তবে সেই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এখানে জামাই আদরে থাকে। সেই ভাইরাসের বউয়ের সন্ধান অবশ্য এখনো পায়নি বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা। অন্যদিকে মোর্চায় তার সদস্যপদও নেই, ডেটাবেজে পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যও। সংগঠনের সদস্যপদ না নিয়েই বাংলাদেশে এভাবে কার্যক্রম চালানোয় মোর্চা হতবাক। সংগঠনটি এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
ভাইরাস মোর্চা বলছে, বাংলাদেশের সর্বস্তরে ‘সীমিত’ শব্দের উদ্দাম ব্যবহার লক্ষ করা গেছে। এরা লকডাউন করে সীমিত, কঠোর বিধি-নিষেধের কথা বলে রাজপথে বাস দৌড়ায় সীমিত পরিসরে, আবার মানুষজনকে ঘরে থাকতে বলা হলেও সবাই সীমিত হাঁটাহাঁটির কথা বলে রাস্তায় নেমে পড়তে পারে। মুখে মাস্ক থাকা এবং মুখ দিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রেও সীমিত শব্দটির বহুল প্রায়োগিক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যাও কম নয়। কখনো কখনো ফেসবুকও চলে সীমিত আকারে! সব মিলিয়ে এক শব্দের নানামাত্রিক ব্যবহারে মোর্চার গবেষণা দলও সীমিত আকারে বিস্মিত হতে বাধ্য হয়েছে।
সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ‘সীমিত’ শব্দের প্রায়োগিক অর্থ প্রকৃতপক্ষে কোনটি, তা জানতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পথ জানতে চেয়েছে বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা। তারা বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, যোগাযোগ সীমিত পরিসরে হলেও মোর্চা আগ্রহী। সেই সঙ্গে সংগঠনটি এ-ও জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধিদলের একমাত্র সদস্য সীমিতভাবে মস্তিষ্ক বিকৃতিতে ভুগছে। এর সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছে মোর্চা।
বিশ্ব ভাইরাস মোর্চার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বারবার ‘সীমিত’ শব্দটি শুনে বাজার থেকে কেনা অভিধানের সঙ্গে মিলিয়ে এক ধরনের দৃশ্য দেখার প্রত্যাশা ওই প্রতিনিধির মনোজগতে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বারবার সেই প্রত্যাশার পারদ হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাওয়ায় এবং পুরোপুরি উল্টো দৃশ্য দেখে প্রতিনিধির হৃদয় ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। ওই প্রতিনিধি আর কোনো বাংলা শব্দের অর্থের প্রতি আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। তার সবই উল্টো বোধ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণেই তার মাথা ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘুরে চলেছে অবিরাম।
এ অবস্থায় বিভ্রান্তি এড়াতে ‘সীমিত’ শব্দের প্রকৃত অর্থ উন্মোচনে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ব ভাইরাস মোর্চা। এ ক্ষেত্রে পাঠানো ই-মেইলে সংগঠনটি হাপুস নয়নে কান্নার ইমো ব্যবহার করেছে। তবে তা দেখতে সীমিত আকারে অট্টহাসির মতো হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না বলেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।