নীলফামারী প্রতিনিধি: ৯৯৯-এ কল পেয়ে নির্যাতনের শিকার গুরুতর জখম বারো বছরের এক শিশু গৃহকর্মীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার বিকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের নিজ বাড়ি হতে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শিশুটির শরীরের গোপনাঙ্গের ক্ষত মারাতœক হওয়ায় তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল (ওসিসি) ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের তালিকাভুক্ত ভিক্ষুক মৃত বাছেদ আলী ফকিরের মেয়ে আঁখিমনি। আঁখিমনির মা শিরিনা খাতুন অভিযোগে জানায়, ডালিম চন্দ্র রায় নামের এক ব্যাক্তির মাধ্যমে তার মেয়ে দুই বছর থেকে গৃহকর্মীর কাজ করতো রংপুর শহরের আর্দশপাড়া মহল্লার দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগম এবং রেজাউল বারী দম্পতির বাসায়। তার স্বামী রেজাউল বারী সরকারী চাকুরি করেন নওগাঁয়।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) ডালিম চন্দ্র রায় আমাকে নিয়ে যায় রংপুরের দন্ত চিকিৎসক কান্তা খাতুনের বাসায়। সেখানে গেলে তারা জানায় আমার মেয়ে টাকা চুরি করেছে। তাই তারা তাকে আর বাসায় রাখবেনা। এ সময় তার মেয়ে সেখানে বলে সে টাকা চুরি করেনি। তবুও বাড়ির লোকজন তাকে শারিরিক নির্যাতন ও গোপনাঙ্গে গরম ছ্যাকা দিয়েছে। এ অবস্থায় ওই দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগম ও তাঁর স্বামী রেজাউল বারী ৩০০ টাকার একটি সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেয়। আমি মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসি। এখানে এসে মেয়ের শারিরিক অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীকে ডেকে বিস্তারিত জানাই। সোমবার দুপুরে গ্রামের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়।
গ্রামের নুরউদ্দিন জানান, বিষয়টি জানার পর আমরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিস্তারিত খুলে বলি। এরপর কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ এসে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাঃ সাবির হোসেন সরকার জানান, শিশুটির সারা শরীরে ও তার গোপনাঙ্গে ক্ষতর চিহৃ মারাতœক। তাই কাল বিলম্ব না করে পুলিশের মাধ্যমে শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল (ওসিসি) ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগমের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান মেয়েটি টাকা চুরি করেছে। ওর মাকে ডেকে আনলে মেয়েটির মা তাকে মেরেছে আমরা মারিনি বা নির্যাতন করিনি।
তবে নির্যাতনের শিকার আখিমনি কান্না বিজরিত কন্ঠে সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন ওই দাঁতের ডাক্তার, ডাক্তারের স্বামী রেজাউল বারী, তার মা খালেদা বেগম তাকে নির্যাতন করে ও প্রস্রাবের স্থানে গরম ছ্যাকা দেয়।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল হক বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে আখিমনি মেয়েটি উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
মেয়েটিকে রংপুর জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে চিকিৎসকের পরামর্শে রংপুর মেডিকের কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও সেল (ওসিসি) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।